কমলকন্ঠ ডেস্ক ।।
জাতীয় সম্পদ রক্ষা ও মাগুরছড়া গ্যাস বিপর্যয়ে ক্ষয়ক্ষতি আদায়, ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রকাশসহ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার প্রতিটি ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগের দেয়ার দাবীতে ১৪ জুন মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় কমলগঞ্জ উপজেলা চৌমুহনা চত্বরে পরিবেশবাদী সংগঠন পাহাড় রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটিএর উদ্যোগে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন শেষে ৫ দফা দাবীতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
পাহাড় রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটির সভাপতি মোনায়েম খানের সভাপতিত্বে ও সাংবাদিক নির্মল এস পলাশের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে সুজন কমলগঞ্জ উপজেলা শাখার সম্পাদক প্রভাষক রাবেয়া খাতুন, প্রভাষক সেলিম আহমদ চৌধুরী, কমলকুঁড়ি সম্পাদক পিন্টু দেবনাথ প্রমুখ।
এ সময় বক্তরা বলেন, মার্কিন কো¤পানী অক্সিডেন্টালের খামখেয়ালিপনার কারণে ১৯৯৭ সালের ১৪ জুন মধ্যরাতে মাগুরছড়া গ্যাসকূপে গ্যাস বিস্ফোরিত হয়। তখন আগুনে পুড়ে গ্যাস, চা বাগান, বনাঞ্চল, রেলপথ, সড়কপথসহ আশপাশের ঘড় বাড়ী। মারাত্বক ক্ষতি হয় পরিবেশের। কিন্তু আজো ক্ষতিপুরন আদায় করা সম্ভব হয়নি। অবিলম্বে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে ক্ষতিপুরন আদায় করতে সরকারকে উদ্যোগ নেয়ার আহবান জানানো হয় মানববন্ধন থেকে। বক্তারা আরো বলেন, কমলগঞ্জের মাগুরছড়া গ্যাস কূপে বিষ্ফোরণের ২৫ বছর পূর্তিতেও এখনও বন পরিবেশ প্রকৃতির কোন ক্ষতিপূরণ দেয়নি মার্কিন বহুজাতিক তেল গ্যাস কোম্পানী অক্সিডেন্টাল, ইউনিকল বা শেভরন। বন পরিবেশ, জীব বৈচিত্র্য, রেলপথ ও সড়ক পথের ক্ষতি পূরণে আজ পর্যন্ত কোন সুরাহা হয়নি।
উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালের ১৪ জুন মাগুরছড়া গ্যাসকূপে বিস্ফোরণ এবং অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের গাছপালা, জীবজন্তুসহ আশপাশের বিস্তীর্র্ণ এলাকা। ভয়াবহ এ বিস্ফোরণের পর ২৫ বছর পেরিয়ে গেলেও অক্সিডেন্টাল-ইউনোকলের উত্তরসূরি শেভরনের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ১৪ হাজার কোটি টাকা আজও আদায় করতে পারেনি সরকার।
১৯৯৭ সালের ১৪ জুন মধ্যরাতে মাগুরছড়া ১নং অনুসন্ধান কূপ খননকালে হঠাৎ করে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছিলো সেখানে। বিস্ফোরণের তীব্র আওয়াজে কেঁপে উঠেছিলো কমলগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা। মুহূর্তে আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে আগুনে পুড়ে যায় লাউয়াছড়া উদ্যানের বিপুল টাকার সম্পদ।
এ ঘটনায় মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির বাড়ি-ঘর, সংরক্ষিত বনাঞ্চল, বন ও পরিবেশের জীববৈচিত্র, চা বাগান, বিদ্যুৎলাইন, আখাউড়া-সিলেট রেলপথ, কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল প্রধান সড়ক, ভূগর্ভস্থ পানি সম্পদ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মারা যায় হাজার হাজার বন্যপ্রাণী। পুড়ে যায় ভূ-গর্ভস্থ উত্তোলনযোগ্য ২৪৫ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আশপাশের এলাকার বৃক্ষ, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র। দুই যুগ আগের বিস্ফোরণের পুড়ে যাওয়া কয়েকটি গাছ আজও কালের সাক্ষী হিসেবে রয়ে গেছে।
মাগুরছড়া ট্রাজেডির তদন্ত রিপোর্টে বেরিয়ে আসে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি অক্সিডেন্টালের খামখেয়ালিপনা, দায়িত্বহীনতা, অবহেলা ও ত্রুটির কথা। ভয়াবহ এই বিস্ফোরণে মোট ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয় প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু ক্ষতিপূরণের টাকা না দিয়েই কোম্পানিটি বাংলাদেশ ত্যাগ করে।
এদিকে ক্ষতিপূরণ আদায়ে ২৫ বছর ধরে আন্দোলন করে আসছে স্থানীয় ও জাতীয় বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন। পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা জানান, মাগুরছড়া গ্যাস বিস্ফোরণের পর কিছু দাবি পূরণ করা হলেও, পরবর্তীতে ক্ষতিপূরণ আদায়ের আর কোন অগ্রগতি হয়নি।