কমলকন্ঠ ডেস্ক ।।
দেশে এমন একটা সময় ছিল যখন আমাদের দেশের বড় ব্যবসায়ী /শিল্পপতিদের পছন্দের তালিকায় প্রথম ছিলো দেশের দ্বিতীয় রপ্তানি পন্য চায়ের ব্যবসা । ইস্পাহানি, এইচআরসি, ইসলামগ্রুপ ট্রান্সকম, হা-মীমসহ বিভিন্ন কোম্পানী মনযোগী হয়েছিল চা বাগান প্রতিষ্টায় । উৎপাদিত চায়ের প্রকৃত মূল্য না পাওয়ার কারণে এখন তারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন এই ব্যবসা থেকে। প্রতিবছর চায়ের উৎপাদন বাড়লেও হচ্ছে না চাষাবাদের সম্প্রসারণ। ফলে বিশ্বের মধ্যে উৎপাদনে ১০ম আর দেশের দ্বিতীয় রপ্তানিপন্য চা শিল্প এখন এক কঠিন সময় অতিক্রম করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অতিরিক্ত খরতাপ অনাবৃষ্টি, উত্তরাঞ্চলে অপরিকল্পিত চায়ের চাষাবাদ, উৎপাদিত চায়ের প্রকৃত মুল্য না পাওয়া এবং দেশে দিন দিন বনভূমি কমে যাওয়াকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা ।
চা-বাগান সংশ্লিষ্টরা এই শিল্পকে ঠিকিয়ে রাখতে চায়ের প্রকৃত মূল্য পাওয়ার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়াসহ সমস্যা দূরীকরণে বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিবর্তে চা শিল্প কে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি চায়ের উৎপাদন খরচ কমাতে সার কীটনাশকের ভর্তুকি বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়,বৃটিশ ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির সময় ১৮৩৪ সালের দিকে দেশের উত্তরপূর্বাঞ্চলের সিলেট জেলায় চায়ের চাষাবাধ শুরু হয়। পরে চট্টগ্রাম জেলায় তা সম্প্রসারিত হয়।বর্তমানে দেশে বানিজ্যিক চা বাগানের সংখ্যা ১৬৬ টি। আর সিলেট অঞ্চলে চা বাগানের সংখ্যা ১৩৭ টি। চায়ের রাজধানী শুধু মৌলভীবাজার জেলায় আছে ৫৮ টি চা বাগান। এর বাইরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় বানিজ্যিক এবং উত্তরাঞ্চলে পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলায় ব্যক্তি পর্যায়ে চায়ের চাষবাদ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বাংলাদেশ চা গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিটিআরআই) সুত্রে জানা যায়, ২০২০-২১ চা মৌসুমে দেশে ৯৫ দশমিক ৬০ মিলিয়ন কেজি এবং ২০২১-২২ মৌসুমে ৯৬ দশমিক ৭০ মিলিয়ন কে জি চা উৎপাদিত হয়। যাহা এখন পর্যন্ত দেশে চায়ের সর্বোচ্চো উৎপাদন রেকর্ড। ফিনলে টি কোম্পানির ভাড়াউড়া চা বাগানের জেলারেল ম্যানেজার (জিএম) মি. শিবলী বলেন, দেশে বর্তমানে চা চাষ সম্প্রসারণে বড় বাধা প্রয়োজনীয় টিলা তথা বনভূমির অভাব। পাশাপাশি চায়ের বাজার মূল্য এখন অনেক কম।
তিনি মনে করেন, উত্তরাঞ্চলের পঞ্চগড় জেলায় চায়ের চাষ হয় ধানের মতো ব্যক্তিপর্যায়ে। সেখানের চাষীরা ধান হয় না এমন কৃষি জমিতে চা লাগিয়ে কাচি( কাস্তে) দিয়ে তা কাটে। এতে তাদের উৎপাদন খরচ কম হয়।
এসব চায়ের গুনগত মান নিম্নপর্যায়ের হওয়ায় ১৫০-৬০ টাকা কেজি দরে তা বিক্রি করে দেয়। যেকারণে আমরা চায়ের প্রকৃত মুল্য পাই না। বাংলাদেশ টি এসোসিয়েশন নর্থ সিলেট ভ্যালির চেয়ারম্যান এবং খাদিম টি কোম্পানির জেলারেল ম্যানেজার (জিএম) নোমান হায়দার চৌধুরী জানান, দেশে এখন ভারতীয় চায়ের বাজার সম্প্রসারিত হওয়ায় চায়ের প্রকৃত মূল্য মিলছে না । ফলে মালিকপক্ষ এখন আর চা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন না।
তিনি আরও জানান,চা চাষে প্রচুর ইউরিয়া, ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএস পি) এবং মিউরেট অব পটাস ( এমওপি) সারের প্রয়োজন হয়। এছাড়া আছে কিটনাশকের প্রয়োজনীয় তা। বাজারে এসব সারের প্রচুর দাম। তাই চা চাষকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিলে ভর্তুকির পরিমান বাড়বে। তখন মালিকপক্ষ চা চাষে আগ্রহী হবে।
বাংলাদেশ টি রিচার্স ইন্সটিটিউট (বিটিআরআই) শ্রীমঙ্গলের পরিচালক মি. মোহাম্মদ আলী বলেন, দেশে চায়ের চাষ সম্প্রসারণে বড় বাধা জমি। চায়ের জন্য প্রয়োজন টিলা রকমের জমি যেখানে থাকবে প্রখর রৌদ্র আর অতি বৃষ্টি। পাশাপাশি কম টেম্পারেচার এবং বাতাসের আদ্রতা। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখন রোধ বৃষ্টির কোনো হিসেব নেই। উত্তরাঞ্চলের অপরিকল্পিত চায়ের চাষ বিষয়ে তিনি বলেন, সেখানে চা চাষ একধরনের কৃষি উৎপাদনের মতো। সেখানের কৃষকেরা নিজেদের পরিত্যক্ত জমিতে চায়ের চাষ করে।দুটি পাতা একটি কুড়ি মানে মানসম্পন্ন চা।এ বিষয়ে তাদের অনেক প্রশিক্ষণ দিচ্ছি কিন্তু তা না মেনে তারা ধানের মতন ক্যাচি দিয়ে চা গাছের আগা কেটে বিভিন্ন মিলে বিক্রি করছে। ফলে চায়ের গুনগত মান বজায় থাকছে না। পাশাপাশি বাজারে চায়ের দর পড়ে যাচ্ছে।