Logo

মণিপুরীদের নববর্ষ উৎসব ‘চৈরাউবা কুম্মৈ’

রিপোটার : / ৩৭৪ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশিত : শনিবার, ২ এপ্রিল, ২০২২

কমলকন্ঠ রিপোর্ট ।।

মণিপুরী সংস্কৃতির নানা বৈচিত্র্যের অন্যতম হলো মণিপুরীদের নববর্ষ উৎসব ‘চৈরাউবা কুম্মৈ’। অপেক্ষাকৃত সংখ্যালঘু মৈথৈ মণিপুরীদের ঐতিহ্যবাহী মণিপুরী নববর্ষ (‘চেরাউবা কুম্মৈ ৩৪২০) উৎসব উপলক্ষে আজ শনিবার আজ শনিবার মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের মণিপুরি কালচারাল কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে এ উৎসবের আয়োজন করে মণিপুরি চৈরাউবা পর্ষদ। অন্যান্য বছরের মতো এবারও এই দিন মণিপুরী নববর্ষ উৎসব ‘চৈরাউব কুম্মৈ ৩৪২০’ উদযাপনের উৎসাহ-উদ্দীপনার কমতি নেই। এ উৎসবকে ঘিরে গত ১৫ দিন ধরে উপজেলার মণিপুরী পল্লীগুলোতে বিরাজ করছিল সাজ সাজ রব ।  আয়োজন করা হয়েছে নানা আনুষ্ঠানিকতার।

দিনভর এ উৎসবের বিভিন্ন পর্যায়ে ছিল আজ সকালে মোমবাতি শিখা প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা ও আনন্দ শোভাযাত্রা। মণিপুরি ঐতিহ্যবাহী পোশাকে নারী-পুরুষ এ শোভাযাত্রায় অংশ নেন। শোভাযাত্রাটি মণিপুরি কালচারাল কমপ্লেক্স থেকে বের হয়ে আদমপুর বাজার ঘুরে আবার কমপ্লেক্সে ফিরে আসে। বেলা ২টায় মণিপুরি নারী ও পুরুষের যৌথ অংশগ্রহণে ‘লিকোন শান্নবা’ (কড়ি খেলা)’র মতো ঐতিহ্য পরম্পরার আয়োজন।’’মঞ্চে নানা বয়সের মণিপুরী নারীরা কড়ি নিয়ে বসেন। উচ্ছ্বাস, চিৎকার, হাসি-হুল্লোড়ের মধ্য দিয়ে অনেকক্ষণ ধরে খেলা চলে। এর এক ফাঁকে অপদেবতাকে তাড়ানোর উদ্দেশ্যে এবং করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষার প্রার্থনায় বনদেবতাকে ভোগ দিয়ে ‘শারোয় খাংবা’ পূজাও সেরে নেওয়া হয়।

আয়োজকেরা জানান, পৃথিবীর নানা প্রান্তে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে নানা ধরনের বর্ষ গণনার রীতি আছে। মণিপুরীদেরও নিজস্ব একটি বর্ষগণনারীতি  রয়েছে। মৈতৈ মণিপুরিদেও এই বর্ষগণনা রীতি ‘মলিয়াফম পালচা কুম’ বা সংক্ষেপে ‘মলিয়াকুম’ নামে পরিচিত। মণিপুরি ভাষায় ‘কুম’ অর্থ বর্ষ বা সন। এটা প্রচলন করেন মণিপুরের রাজা কাংবার জ্যেষ্ঠ পুত্র ‘কোইকোই’। এই বর্ষ গণনারীতি চান্দ্র পদ্ধতি অনুসরণে। ‘মালিয়াকুম’ নামের এই চান্দ্রবর্ষের হিসেবে ৩৪২০ তম বর্ষ শুরু হবে ০২ এপ্রিল।  মণিপুরি সমাজেও পয়লা বৈশাখ নববর্ষ হিসেবে প্রচলিত। পাশাপাশি মলিয়াকুমের প্রথম দিনও নববর্ষ হিসেবে উদ্যাপিত হয়ে আসছে নীরবে। মণিপুরি ভাষায় নববর্ষকে বলা হয় ‘অনৌবাকুম’। তবে নববর্ষের উৎসবকে বলা হয় ‘শজিবু চৈরাউবা’ বা শুধুই ‘চৈরাউবা’। মণিপুরী সম্প্রদায় আয়োজিত অনুষ্ঠেয় এ বিশেষ উৎসবে অতিথি হিসেবে বিভিন্ন এলাকার সংস্কৃতিপ্রেমীদের পাশাপাশি প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরাও যোগ দেন বলে জানিয়েছেন উৎসব সংশ্লিষ্টরা।বারও তার ব্যাতিক্রম ঘটবেনা । আলোচনা সভা শেষে অনুষ্টিত হবে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্টান ।

এরপর রাতে উন্মুক্ত স্থানে শুরু হবে কাংখিত নেই ‘থাবল চোংবা’ নৃত্য। অনেক রাত পর্যন্ত চলবে এই নৃত্যগীত । রাত যত বাড়বে ততই বাড়তে থাকবে মণিপুরিদের বর্ণাঢ্য লোকনৃত্যের পরিবেশনা ‘থাবল চোংবা’য় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা। সেই সঙ্গে দর্শকও। মণিপুরি অধ্যুষিত গ্রামগুলো থেকে দলবেঁধে আস মানুষগুলোর পাশাপাশি অন্য সমাজের মানুষও এই অনুষ্টানে সমান আগ্রহে উপভোগ করতে আসবেন । একটি নির্দিষ্ট সুর ও তালের গানের সঙ্গে মণিপুরি তরুণ-তরুণীরা গোলবৃত্তে হাতে হাত ধরে নৃত্যগীত পরিবেশনের এই ‘থাবল চোংবা’ নাচই হলো দিনব্যাপী মণিপুরি নববর্ষ উৎসব চৈরাউবার শেষ আয়োজন। উৎসবের আমেজ চলবে ১৫দিন ব্যাপী। একে অপরের বাড়িতে নিমন্ত্রণে যাবেন আর সেই সাথে চলবে হোলি খেলা।


আরো সংবাদ পড়ুন...
Developed By Radwan Ahmed