কমলকন্ঠ ডেস্ক।। মৌলভীবাজারে মানচিত্রে নদী ও ছড়া থাকলেও বাস্তবে অনেক স্থানে এখন অস্থিত নেই। বিলাস নদী, লাংলী নদীতে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন, উপজেলার একাধিক পাহাড়ের মাটি কাটাসহ নানা স্বার্থে নির্বিচারে বিলীন করে দিচ্ছে একটি চক্র। এ যেন এক মহোৎসব সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। বিগত কয়েক বছরে লাংলী নদীসহ এ অঞ্চলের প্রায় অর্ধেকের চেয়ে বেশি নদী, পাহাড় ও টিলা কেটে সমতল করা হয়েছে। স্থানীয় লোকজনের মাঝে চাপা ক্ষোভ থাকলেও ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারছেন না।
একটি প্রভাবশালী মহল ক্ষমতার দাপট ও প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এসব সাবাড় করে ফেলছে। ফলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকি মুখে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নদীর পাড়ে বসবাসকারী অসহায় লোকজন।
শ্রীমঙ্গলের রাজঘাট দিয়ে প্রবাহিত লাংলী নদী হেতিমগঞ্জ নামক স্থানে বিলাস নদীতে গিয়ে হাইল হাওরে মিলিত হয়েছে। পাহাড়ের মধ্য দিয়ে বয়ে আসা এ নদীর রূপরেখা খালে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে অলিপুর (মতিগঞ্জ) গ্রামের জৈনক ব্যক্তি অবৈধ ভাবে লাংলী নদী থেকে অধ্যাধুনিক মেশিন এর মাধ্যমে বালু উত্তোলন করছেন।
ফলে জনসাধারণ এর জন্য চলাচলের জন্য রাস্থা ও বাড়ী ঘর হুমকির মুখে। বর্ষা মৌসুমে নদীগুলোর দু’তীর ভেঙে প্লাাবিত হয়ে পানিতে তলিয়ে যাবে ঘরবাড়ি ও কৃষকের সোনালী ফসল। জানা গেছে- জেলায় অন্যতম মনু, ধলাই, ফানাই, সোনাই ও জুড়ী নদী। অন্যদিকে শাখা নদী বরাক, বিলাস, লাংলী, গোপলা ও আন ফানাই নদী ও খালসহ রয়েছে অসংখ্য ছড়া। কোন রকম যেগুলো ঠিকে আছে তাও রয়েছে মহা হুমকিতে।
স্থানীয় নদী গুলোর এমন বেহাল দশায় দেশীয় প্রজাতির মাছ, জলজ প্রাণি ও উদ্ভিদ এর উপর বিরুপ প্রভাব পড়েছে। এমন মুমূর্ষ অবস্থা হলেও দেখার কেউ নেই।
একাধিক স্থানীয়রা বলছেন, এমন দূর্দশা চলতে থাকলে কয়েক বছরের মধ্যেই দৈন্য দশায় নদীগুলো নিজের অবস্থান জানান দিচ্ছে তাও বিলিন হয়ে যাবে। প্রতিবছরই পলি জমে ভরাট হচ্ছে নদী। আর এই সুযোগে চলছে দখল উৎসব। যে যার মত প্রভাব খাটিয়ে চালাচ্ছেন দখলদারিত্ব। ধীরে ধীরে পাল্টে যাচ্ছে দৃশ্যপট। নদী ও ছড়া মানুষের দখলে গিয়ে রুপ বদলাচ্ছে। ভরাট হওয়া অংশে গড়ে ওঠছে ঘরবাড়ি কিংবা ক্ষেতের ভূমি।
উল্লেখ্য- সিন্ডিকেট চক্র বিনা বাঁধায় মাইলের পর মাইল পাহাড় সাবাড় করছে। অন্যদিকে, ড্রেজার মেশিন দিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন, নদী থেকে অবৈধ ভাবে মাছ নিধন করছে। এসব অনিয়ম-দুর্ণীতির কারণে সরকারের বিপুলপরিমান রাজস্ব ফাঁকির ঘটনায় স্থানীয় এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সংশ্লিস্ট বিভিন্ন দপ্তরে একাধিক লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হলেও কার্যকরী প্রদক্ষেপ নিচ্ছে না প্রশাসন। অন্যদিকে নদী, গ্রামীণ সড়ক ও ছড়ার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
এ ব্যপারে জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন- এখানে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট কাজ করে। অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন, মাছ নিধন ও পাহাড় কাটার ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন এর দায়ে আজও ট্রাকসহ আটক করা হয়েছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় কমিউনিটির লোকজন প্রশাসনকে সহযোগীতা করতে হবে।