Logo
সংবাদ শিরোনাম :
ভানুবিলের কৃতিপুরুষ জননেতা হিজম ইরাবতের ১২৭ তম জন্মবার্ষিকী পালিত কমলগঞ্জে জাতীয় কন্যা শিশু দিবস পালিত কমলগঞ্জে বিশ্ব পর্যটন দিবস পালিত  অনৈতিক সম্পর্কের ছবি দেখিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগে কমলগঞ্জে যুবক আটক  কমলগঞ্জে বিভাগীয় কমিশনারের মতবিনিময় সভা কমলগঞ্জে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি বিষয়ে মতবিনিময় সভা ফতেপুর ইউনিয়নের সার্ভার হ্যাক করে রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন  মৌলভীবাজারের কৃতি সন্তান পরমানু বিজ্ঞানী ড. খলিলুর রহমান আর নেই সৈয়দ শামসুল ইসলাম বাবুর জানাজা সম্পন্ন, বিভিন্ন মহলের শোক প্রকাশ কমলগঞ্জ পৌরসভায় ওয়াটার সাপ্লাই প্রকল্পের ৪৮টি পাইপ গায়েব !

২০ বছর যাবৎ শংকরীর শিকলবন্দী জীবন !

রিপোটার : / ৩০৭ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশিত : শনিবার, ২১ আগস্ট, ২০২১

কমলকন্ঠ ডেস্ক রিপোর্ট ।।

ভাঙা চোরা টিনের ছোট্ট একটি কুটির। বাঁশের সঙ্গে জিআই তারে বাঁধা কুটিরের টিনগুলো জং পড়ে নষ্ট হয়েছে অনেক আগেই। এই টিনেই এক পাশে অল্প জায়গায় রেখে ঢেকে দেয়া হয়েছে চারপাশ। এখানে আসে না আলো-বাতাস কিংবা মানুষের কোনো ছায়া।

দূর থেকে এর কোনো বাস্তবতা বোঝা না গেলেও কাছে আসলেই দুর্গন্ধে বন্ধ হয়ে আসে নিঃশ্বাস। দমবন্ধ করা নিঃশ্বাসে দেখা মিলে ভেতরে বাস্তবতা। টিনের এই কুটির মূলত পরিত্যক্ত একটি টয়লেট। ভেতরের বাঁশের উপর কাঠের তক্তা পেতে জীবন কাটছে মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারীর।

পরিত্যক্ত এই টয়লেটই তার বাসস্থান। কখনো বসে কখনো বা বালিশ তোশক বিহীন শুয়ে শিকলে বন্দি হয়ে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন শংকরী লাল গুহ। ডান পায়ের গোড়ালির উপরে লোহার শিকল দিয়ে তালা বন্দি। অপর পাশ আবার বাঁধা হয়েছে টয়লেটেই আরেকটি মোটা বাঁশের সঙ্গে। দীর্ঘদিনের এই বাঁধনে পায়ে পড়েছে দাগ শিকলেও ধরেছে মরিচা। তবুও এখানেই খাওয়া-দাওয়া, ঘুম, পয়ঃনিষ্কাশন সহ চলে সবকিছুই।

জীবন সংগ্রামে হেরে দুর্বিষহ জীবন কাটানো শংকরী বাড়ি নেত্রকোনার দুর্গাপুরে। পৌর শহরের আমলাপাড়া স্বর্গীয় শম্ভুলাল গুহের তৃতীয় সন্তান তিনি। এছাড়াও রয়েছে বড় দুই বোন ছোট আরো একটি ভাই। প্রচণ্ড মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও এখন তার জীবন কাটছে চার দেয়ালে বন্দি হয়ে। পরনে কালো রঙের জামা পুরাতন হয় ছিঁড়ে হয়েছে কয়েক টুকরো। তা দিয়েই কোনোরকমে ঢাকা শরীরটুকু। চুলগুলো শক্ত হয়ে বেঁধেছে জটলা।

মেধাবী এই শিক্ষার্থী শহরের বিরিশিরি মিশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পড়ালেখা করেছেন দীর্ঘদিন। পড়াশোনা চলাকালীন বাবার মৃত্যুতে থমকে যায় তাদের পুরো পরিবার। বাবার শোক কাটিয়ে মামার বাড়িতে থেকে বেশ কয়েকদিন পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও দারিদ্রতার কারণে নবম শ্রেণির গণ্ডি পেরোতে পারেননি।

পড়াশোনা বন্ধ করে বাড়িতে সংসারের কাজে মনোনিবেশ শুরু করেন তিনি। ২০০১ সালে হঠাৎ করে একদিন নাকের সমস্যা দেখা দিলে কয়েকদিনের ব্যবধানে তা রূপ নেয় টিউমারে। পরিবারের সদস্যরা এর চিকিৎসা করে ভালো করলেও এরপর থেকে হঠাৎ করে অস্বাভাবিক ভাবে পরিবর্তন হতে শুরু করে তার আচরণ। একপর্যায়ে পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।

এখান থেকেই শুরু তার বন্দিজীবন। পায়ে কখনো বা মোটা রশি কিংবা শিকল বেঁধে শুরু হয় আটকে রাখার চেষ্টা। পাগল মেয়েকে কোনোরকম শান্ত রেখে সবসময় দেখে শুনে রাখছেন তার মা। তবে ২০১৩ শেষের দিকে তার মায়েরও মৃত্যু হলে সংসারের পুরো বোঝা কাঁধে পড়ে ছোট ভাই জীবন লালগুহের। স্থানীয় একটি প্যাথলজিতে সামান্য পিয়নের চাকরি করে কোনোরকম সংসার চালিয়ে গেলেও বোনের চিকিৎসার অর্থ যেন কোনভাবেই যুগিয়ে উঠতে পারেন না ভাই।

তাছাড়া পুরো বাড়ি জুড়ে ভাঙা চোরা টিনের এই একটিমাত্র ঘর। ঘরের দুটি রুমে গাদাগাদি করে থাকেন ৫ সদস্যের পরিবার। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না পেয়ে বাড়ির পেছনে পুকুর ঘাটের সঙ্গে পরিত্যক্ত টয়লেটের উপর টিনের বেড়া দিয়ে তার ভেতর রেখেন মানসিক ভারসাম্যহীন বোনকে।

এরপর থেকেই এর ভেতরেই নিঃসঙ্গ জীবন কাটাচ্ছেন শংকরী। সর্বদা নিশ্চুপ থেকে কুটিরের ভিতর লুকিয়ে রাখেন নিজেকে। কারো সঙ্গে কথা বলেন না। বাহির থেকে কেউ কিছু দিলে তার ভিতরে নিয়ে চুপচাপ বসে খেতে থাকেন। করেন না গোসলও তাই অপরিচ্ছন্ন ও ছেরা কাপড় পড়ে পার করছেন বছর পর বছর।

স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে আমরা শংকরীকে এভাবেই এক ঘরের ভিতরেই দেখে আসছি। আমি কখনোই তাকে বাহিরে আসতে দেখি নাই গোসল করতে দেখিনি। খাওয়া-দাওয়া পয়ঃনিষ্কাশন সবকিছু তিনি ঘরের ভিতরে করেন। কারো সঙ্গে কোনো কথা বলেন না তাছাড়া দুর্গন্ধের কারণে কেউ তার সামনেও যায় না। এভাবে একটা মানুষ কতদিন বাঁচতে পারে। তার জন্য আমাদের অনেক কষ্ট হয়। তার ভাইও অনেক গরিব মানুষ। আর্থিক সংকটের কারণে তাই বোনটিরও চিকিৎসা করাতে পারছেন না। এখন যদি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারের পক্ষ থেকে কেউ এগিয়ে আসেন তাহলেই হয়তো শংকরী আবারও নতুন জীবনে ফিরতে পারেন।

শংকরীর স্কুল জীবনের সহপাঠী শ্যামল রায় জানান, ওর সঙ্গে আমরা ছোটবেলায় খেলাধুলা এবং পড়াশোনা করেছি। তিনি অনেক মেধাবী ছিলেন। বেশিরভাগ সময় তিনি মামার বাড়ি শিবগঞ্জ থেকেই বিরিশিরি মিশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পড়াশোনা করতেন। হঠাৎ করেই কি জানি হয়ে গেল তারা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে যায়।

পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও অনেক চিকিৎসা করিয়েছেন তবুও তাকে ভালো করতে পারেনি। বাবা-মা দুজনই মারা গেছেন। তার একমাত্র ভাই সংসারের বোঝা টেনে নিয়ে আর চিকিৎসা করতে পারেননি। তাই সে খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছে।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার তো অনেকেই মানুষকেই বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে সুস্থ করেছেন। তাকেও একটু ভালো চিকিৎসা দেয়া যেতো তাহলে সেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারতো বলে আমরা মনে করি।

শংকরী গুহের ভাই জীবন লাল গুহ বলেন, হঠাৎ করেই আমার বোন অসুস্থ হয়ে গেছে। নাকে একটু সমস্যা হয়েছিলো টিউমারের মতো এরপর থেকেই তার এই সমস্যা হইছে। আমরা ডাক্তার দেখাইছি ওষুধ খাওয়াইছি তারপরও কোনো কাজ হইছে না। প্রায় ২০ বছরের উপরে হয়ে গেছে তার এই মানসিক সমস্যা। তার এই অবস্থা দেখে তো আমার অনেক কষ্ট লাগে কিন্তু কি করবো। আমার তো কোনো সামর্থ্য নাই।

তিনি আরো বলেন, সামান্য একটা চাকরি করে তাদের কোনো রকমে সংসার চলে। নিজের ঘর ভেঙে পড়তাছে এখন তার জন্য একটা ঘর করে দেবো তারও কোনো ব্যবস্থা নেই। ৪/৫ জনের পরিবার চলার সমস্যা আর্থিক সংকট। তাই এখন তার কোনো চিকিৎসা করতে পারতেছি না।

ইউএনও রাজিব উল আহসান জানান, বিষয়টা আমাদের নজরে ছিলো না আমরা মাত্র জানলাম। মানবিক এই বিষয়গুলো নিয়ে আগে থেকেই সরকার কাজ করে যাচ্ছে আমরাও রুড লেভেলে কাজ করে যাচ্ছি। সে ক্ষেত্রে আমরা অবশ্যই এটা পরিদর্শন করবো। মানসিক ভারসাম্যহীন শংকরী গুহের প্রয়োজনগুলো আমরা সরকারি স্কিমের ভেতর থেকেই তা ফুলফিল করার চেষ্টা করবো।

প্রাথমিকভাবে তার বাসস্থানের জন্য টিনসহ প্রয়োজনীয় খাদ্য সহায়তা প্রদান করা যাবে। পাশাপাশি সে যদি বুদ্ধি বা মানসিক প্রতিবন্ধী হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই সমাজসেবা অধিদফতরের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ভাতারও ব্যবস্থা করে দিবো।


আরো সংবাদ পড়ুন...
Developed By Radwan Ahmed