কমলকন্ঠ রিপোর্ট ।। আগর-আতর মূলত মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক ব্যবসা। করোনাকালে বিমানের ফ্লাইট বন্ধ। কোনো পণ্যই পাঠানো যায়নি। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তাও অনিশ্চিত। আমার প্রায় সাত-আট লাখ টাকার পণ্য অবিক্রীত আছে। বিক্রি না হওয়ায় আতর উৎপাদন বন্ধ রেখেছি। উৎপাদন করলে শ্রমিকদের খরচ দিতে হবে। কিন্তু বিক্রি না হলে লোকসান গুণতে হবে। আমার কারখানায় আগে যেখানে আগর কাঠ ফিনিশিংয়ের কাজ করতেন ১০-১২ জন। সেখানে এখন চারজন কাজ করেন। অনেকে কাজ হারিয়েছেন। বড় ব্যবসায়ীরা বেশি লোকসানে রয়েছেন। তাদের অনেকের কোটি টাকার ওপরে আগর-আতর অবিক্রীত আছে।
আগর-আতর ব্যবসার বর্তমান অবস্থা তুলে ধরতে কথাগুলো বলেন মৌলভীবাজারের আমেনা অ্যান্ড ফাতেমা আগর উড অ্যান্ড পারফিউমের পরিচালক আদিব মজিদ।
তিনি আরো বলেন, করোনাভাইরাসের প্রভাবে স্থবির হয়ে পড়েছে মৌলভীবাজারের ঐতিহ্যবাহী সুগন্ধি আগর-আতর শিল্প। পণ্য বিক্রি না হওয়ায় বড়লেখার সুজানগরের বড় কারখানাগুলোর কার্যক্রম হয়ে পড়েছে সীমিত। অন্যদিকে ছোট ছোট অনেক কারখানার কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে কাজ হারিয়েছেন এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত অসংখ্য শ্রমিক। ব্যবসায়ীরাও বিপাকে আছেন।
স্থানীয় সূত্রে আরো জানা যায়, আগর-আতরের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত রয়েছেন মৌলভীবাজারের অন্তত ৪০ হাজার মানুষ। বন বিভাগের তথ্য মতে, নিবন্ধিত কারখানার সংখ্যা ১৭৬টি হলেও এর সংখ্যা তিন শতাধিক। বড়লেখা উপজেলার সুজানগর ইউপিতে আগর-আতর উৎপাদনের জন্য অনেক কারখানা আছে। এখান থেকে উৎপাদিত শতকোটি টাকার আতর প্রতিবছর পাঠানো হয় মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। তবে প্রতিবছর কী পরিমাণ আতর বিদেশে রফতানি হয়, তার সঠিক কোনো তথ্য সংশ্লিষ্ট দফতরের কাছে নেই। মূলত দেশ থেকে বিদেশগামী ব্যক্তিদের মাধ্যমে লাগেজ পদ্ধতিতে আতরটি বেশি পাঠানো হয়।
সুজানগর এলাকার স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের পাশাপাশি বিশ্ববাজারেও দিন দিন চাহিদা বাড়ছে পণ্যটির। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, বাহরাইন, মালয়েশিয়া, ওমান, ইয়েমেনসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে আগর-আতর রফতানি হয়। কুয়েত, সৌদি আরব, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও আরব আমিরাতের দুবাইয়ে বাংলাদেশিদের কয়েকটি আগর-আতর কারখানা রয়েছে, যেখানে কাঁচামাল যেত মৌলভীবাজার থেকে। শুধু জেলার বড়লেখাতেই বছরে আগরের নির্যাস এক হাজার লিটার উৎপাদিত হয়।
বাংলাদেশ আগর অ্যান্ড আতর ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, করোনাকালে ব্যবসায়ীদের প্রায় ২০০ কোটি টাকার আতর অবিক্রীত রয়েছে। করোনার কারণে দেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যগামী বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় প্রবাসীদের মাধ্যমে এই আতর পাঠানো যায়নি।
অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে, ২০১৯ সালে বৈধ ও লাগেজ পথে জেলা থেকে সাত হাজার লিটার আতর বিদেশে পাঠানো হয়েছে। প্রতি লিটারের গড় দাম ছয় লাখ টাকা হিসাবে যার বাজার মূল্য প্রায় ৪২০ কোটি টাকা। অন্যদিকে, আগর কাঠ রফতানি হয় প্রায় ১০ হাজার কেজি। যার বাজার মূল্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা। সারা বছর কমবেশি আগর-আতর তৈরির কাজ হয়। তবে জানুয়ারি থেকে শুরু হয় রপ্তানির মৌসুম।
বাংলাদেশ আগর অ্যান্ড আতর ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আনসারুল হক বলেন, প্রতিবছর আনুমানিক সাত হাজার লিটার আতর এবং ১০ হাজার কেজি কাঠ রফতানি হয়। গত বছর আমি প্রায় আড়াই হাজার লিটার আতর পাঠিয়েছি। এ বছর করোনার কারণে আগর তেমন রফতানি করা যায়নি। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে ফ্লাইট সুবিধা স্বাভাবিক হলে আগরের বিক্রি বাড়বে।
বড়লেখার ইউএনও মো. শামীম আল ইমরান বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা যে সমস্যায় পড়েছেন, তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। পরিস্থিতি জানতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের একটি টিম এলাকা পরিদর্শন করে গেছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ীদের যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, সেগুলো সমাধানের বিষয়েও কাজ করা হচ্ছে।