Logo
সংবাদ শিরোনাম :
ভানুবিলের কৃতিপুরুষ জননেতা হিজম ইরাবতের ১২৭ তম জন্মবার্ষিকী পালিত কমলগঞ্জে জাতীয় কন্যা শিশু দিবস পালিত কমলগঞ্জে বিশ্ব পর্যটন দিবস পালিত  অনৈতিক সম্পর্কের ছবি দেখিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগে কমলগঞ্জে যুবক আটক  কমলগঞ্জে বিভাগীয় কমিশনারের মতবিনিময় সভা কমলগঞ্জে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি বিষয়ে মতবিনিময় সভা ফতেপুর ইউনিয়নের সার্ভার হ্যাক করে রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন  মৌলভীবাজারের কৃতি সন্তান পরমানু বিজ্ঞানী ড. খলিলুর রহমান আর নেই সৈয়দ শামসুল ইসলাম বাবুর জানাজা সম্পন্ন, বিভিন্ন মহলের শোক প্রকাশ কমলগঞ্জ পৌরসভায় ওয়াটার সাপ্লাই প্রকল্পের ৪৮টি পাইপ গায়েব !

ধ্বংসের পথে ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের বাড়ি

রিপোটার : / ৭৪০ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশিত : মঙ্গলবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২০

কমলকন্ঠ রিপোর্ট ।।

পাকিস্তান গণপরিষদে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার প্রথম প্রস্তাবকারী ভাষাসৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি প্রথম মায়ের ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে তুলে ধরেছিলেন। অথচ আজ সেই অকুতোভয় ভাষা সৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের বাড়িটি যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হচ্ছে। বাংলার এই সূর্য সন্তানের স্মৃতিবিজড়িত একমাত্র বাড়িটি প্রশাসনের অবহেলা আর উত্তরাধিকারীদের ইতিবাচক সাড়ার অভাবে ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে।

বাড়িটি দেখার কেউ নেই। ভাষা সৈনিকের বাড়িটি এখন ময়লা আবর্জনায় সয়লাব। বাড়িটির দক্ষিণ পাশে হাসপাতালের বর্জ্য, অন্যপাশে নালার দুর্গন্ধযুক্ত কালো পানি, মাঝে টিনশেডের একটি ঘর, তার পেছনে জঙ্গলে ঢাকা পড়েছে চার কক্ষবিশিষ্ট ভবনটি, যা একেবারে জরাজীর্ণ! টিনশেডের ঘরটির চালও ফুটো, যেটি বৈঠকখানা হিসেবে ব্যবহার করতেন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। আর বর্ষা মৌসুমে একটু বৃষ্টি হলেই জমে হাঁটু পানি। চরম অযত্নে-অবহেলায় পড়ে থাকা বাড়িটির সংস্কার ও সংরক্ষণের উদ্যোগ কখনো কেউ নেয়নি।

তৎকালীন তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী ২০১০ সালে বাড়িটি পরিদর্শন করে এখানে ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু ৮ বছরেও সেই আশ্বাস পূরণে আর কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

কুমিল্লা নাগরিক ফোরাম, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের দাবি এই ভাষা সৈনিকের স্মৃতিরক্ষার্থে বাড়িটি সংস্কার, সংরক্ষণ করে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত জাদুঘরে রূপান্তর করা হোক।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেল, কুমিল্লা নগরীর ঝাউতলা ধর্মসাগরের পশ্চিমপাশে ভাষা সৈনিকের সেই বাড়িটি একেবারেই বসবাসের অনুপযোগী। বাড়িতে ঢুকতেই চায়ের দোকান, বৈঠকখানার টিনশেডের ঘরটিতে রয়েছে মোট ছয়টি কক্ষ, যার দুইটি কক্ষে প্রায় ১৩ বছর ধরে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন সুজন মিয়া নামে একজন। তিনি মারা যাওয়ার পর তার স্ত্রী জাহানারা বেগম এবং ছেলে রিপন মিয়া তার পরিবার নিয়ে বর্তমানে সেখানে বাস করছেন। তারা মূলত কেয়ারটেকার হিসেবে এই বাড়িতে আছেন। পেছনের বাকি ৪টি কক্ষে পঁচাপানি, ময়লা-আর্বজনায় পরির্পূণ। দেয়ালের ইটগুলো খসে খসে পড়ছে। বাড়ির বাইরের দিকটাও ময়লা-আর্বজনার স্তূপে পরিপূর্ণ। বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনা ও জঙ্গলে চারটি কক্ষ ঢাকা পড়েছে।

ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত যে কক্ষে ঘুমাতেন সেখানে তার শোওয়ার খাটটি এখনো রয়েছে, রয়েছে তার বালিশ। আরো আছে খাওয়ার প্লেট, পানির গ্লাস, গায়ের কাঁথা। এগুলো কিছুই সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। পড়ে আছে এদিক-সেদিক। বাড়ির সামনে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত নামের সাইনবোর্ডটিও ভেঙে পড়ে গেছে। পুরো বাড়িটিই এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ফলে এই সূর্যসন্তানের স্মৃতি এখন নিঃশেষ হওয়ার পথে।

স্থানীয় বিশিষ্টজনেরা জানান, তৎকালীন তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ ২০১০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বাড়িটি পরিদর্শন করেন। তিনি চারদিক ঘুরে বাড়িটির দুরবস্থা দেখে হতাশা ব্যক্ত করেন।

পরিদর্শন শেষে ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণের কাজ খুব শিগগির শুরু হবে বলে আশ্বাস দেন আবুল কালাম আজাদ।

ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নাতনি একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) কর্মকর্তা অ্যারোমা দত্ত বলেছিলেন, এখানে ১৫ শতাংশ জায়গা রয়েছে। জাল-দলিল করে জনৈক ব্যক্তি ওই জায়গার মালিকানা দাবি করেন। এরপর সেটা নিয়ে মামলা হয়। এ জায়গাটিই আমাদের একমাত্র সম্বল। এখানে উঁচু দালান করে এর প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মৃতি জাদুঘর করতে চাই। বাকিগুলো নিজেদের কাজে ব্যবহার করবো।

তিনি আরো বলেন, ভাষা আন্দোলনের প্রথম বীজ বপণকারী ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। যিনি পাকিস্তান গণপরিষদে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রথম প্রস্তাবকারী। এমনকি তিনি পাকিস্তান সরকারের রোষাণলে পড়ে বহুবার কারাবরণ করেন। পরে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি মিলিটারিদের হাতে পুত্রসহ তার মৃত্যু হয়। আমরা তার লাশ পাইনি। যিনি দেশের জন্য এতকিছু করেছেন পারলে সরকার তার জন্য কিছু করুক।

কুমিল্লার বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নিশাত আহমেদ বলেন, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রথম প্রস্তাবকারী পাকিস্তানি মিলিটারিদের হাতে নির্যাতিত হয়ে মারা গেছেন। সেই কুমিল্লার সূর্যসন্তান শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটাও হারাতে বসেছি আমরা।

এই বাড়ির উত্তরাধিকারীদের একমাত্র সম্পদ যেহেতু দান করতে নারাজ, সেহেতু সরকার তাদের কাছ থেকে কিনে নিতে পারে বাড়িটি। বিকল্প হিসেবে অন্য কোনো স্থানে এমন কিছু করা হোক যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে স্মরণ করতে পারে। এমনটাই মত প্রকাশ করেন নিশাত। 

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) কুমিল্লা জেলা সাবেক সভাপতি আলী আকবর মাসুম বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে ভুলতে বসেছে। অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকায় একমাত্র বাড়িটিও সংস্কার ও সংরক্ষণের অভাবে হারাতে বসেছি। স্মৃতিরক্ষার্থে যে কোন মূল্যেই হোক শচীন দেবের বাড়ির মতো সংস্কার করে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের বাড়িটিও সংরক্ষণ করার দাবি জানান তিনি।

কুমিল্লা জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের বাড়িটি ব্যক্তি মালিকানার। সরকারি সম্পত্তি হতো, হলে আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু করতে পারতাম। এখনো তাদের ওয়ারিশ বেঁচে আছেন। তারা যদি সরকারকে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের সম্পত্তি দান করেন, তাহলে সরকার তার স্মৃতিরক্ষার্থে জাদুঘরসহ আরো ভালো কিছু করতে পারবে।

১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদে কুমিল্লার এই সাহসি সন্তান ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত সর্বপ্রথম বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি উত্থাপন করেন। এতে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের রোষাণলে পড়ে তিনি বহুবার কারাবরণ করেন। পরে ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ গভীর রাতে নিজ বাড়ি থেকে পাকিস্তানি মিলিটারিরা পুত্র দিলীপ দত্তসহ তাকে কুমিল্লা সেনানিবাসে ধরে নিয়ে যায়। সেখানে ৮৫ বছর বয়সি এই দেশপ্রেমিক রাজনীতিকের ওপর চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও তার মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যায়নি।


আরো সংবাদ পড়ুন...
Developed By Radwan Ahmed