Logo
সংবাদ শিরোনাম :
ভানুবিলের কৃতিপুরুষ জননেতা হিজম ইরাবতের ১২৭ তম জন্মবার্ষিকী পালিত কমলগঞ্জে জাতীয় কন্যা শিশু দিবস পালিত কমলগঞ্জে বিশ্ব পর্যটন দিবস পালিত  অনৈতিক সম্পর্কের ছবি দেখিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগে কমলগঞ্জে যুবক আটক  কমলগঞ্জে বিভাগীয় কমিশনারের মতবিনিময় সভা কমলগঞ্জে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি বিষয়ে মতবিনিময় সভা ফতেপুর ইউনিয়নের সার্ভার হ্যাক করে রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন  মৌলভীবাজারের কৃতি সন্তান পরমানু বিজ্ঞানী ড. খলিলুর রহমান আর নেই সৈয়দ শামসুল ইসলাম বাবুর জানাজা সম্পন্ন, বিভিন্ন মহলের শোক প্রকাশ কমলগঞ্জ পৌরসভায় ওয়াটার সাপ্লাই প্রকল্পের ৪৮টি পাইপ গায়েব !

কারিগরদের দূর্দিন :: চরম সঙ্কটে মৌলভীবাজারের শীতল পাটি শিল্প

রিপোটার : / ৬৬০ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশিত : রবিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০

কমলকন্ঠ রিপোর্ট ।।

ঘরের বারান্দায় বসে শীতল পাটিতে নকশা তুলছেন কুলাউড়ার ভুকশিমইল ইউনিয়নের কলেসার গ্রামের ধীরেন্দ্র দাশ। তাকে সহায়তা করেন স্ত্রী কল্পনা দাশ। তাদের নিপুণ হাতে শীতল পাটিতে বাহারি নকশা উঠেছিল এতদিন। পাটিতে নানা রঙের নকশা তুললেও তার মনে নেই সে রঙের ছিটেফোটা। রাত-দিন পরিশ্রম করে আর্থিক সচ্ছলতা আসেনি তাদের পরিবারে। শুধু জীবনের তাগিদে কোনোমতে আঁকড়ে আছেন বাপ-দাদার এই পেশা।

যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন ধরণের পাটি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করলে নায্য মূল্য না পাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে অনেকে এই পেশা ছেড়েছেন। তবে ঐতিহ্য হিসেবে ধীরেন্দ্র দাশ অনিল দাশ এর মতো কিছু পরিবারে এখনো টিকে আছে পাটি তৈরির কাজে। নিত্যদিনের টানাপোড়ন তাদের জীবন সঙ্গী।

২০১৭ সালে বাংলাদেশের শীতল পাটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষণা করে জাতিসংঘের শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো। তবে এ ঘোষণা সত্তে¡ও ভাগ্য ফিরেনি শীতল পাটির শিল্পীদের। কাঁচামাল সঙ্কট ও নায্যমূল্য না পাওয়ায় দিনেদিনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন এই নিপুন কারিগড়রা।

এধরণের পাটি শিল্পী রয়েছেন মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের হাকালুকি হাওর সংলগ্ন গ্রাম পশ্চিম গগড়ায়। সেখানে বীরেশ দাশও বাপ-দাদার পেশা আঁকড়ে ধরে আছেন।

কথা হয় বীরেশ দাসের সাথে বলেন, “২৫ বছর থাকি আমরা পাটি বানাইরাম কিন্তু এখন আর আগর মতো লাভ নাই, বেতও পাওয়া যায় না। বেতের দাম দিয়া পাটি বানাইয়া সংসার চালানি যায় না অন্য কোনো কাজও জানিনা, তাই এ কাজ করি। যারা কাজ পারেন লেখাপড়া শিখেছেন তারা চাকরি করছেন। বিদেশে গেছেন। তাদের পরিবারে সচ্ছলতাও এসেছে।”

আরেক পাটিশিল্পী মানিক দাস। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, ‘আগে আমাদের সম্প্রদায়ের ১৬ আনা মানুষই এ কাজে আছিল, এখন আছে দুই আনা। অন্য কাম পাইলে আমিও ইতা করতাম না। সরকারি সহযোগীতা পেলে কিছু সচ্ছলভাবে আমরা কাজ করতে পারতাম। যারা জড়িত আছেন তাদের অবস্থাও খুব একটা ভালো না।’

মুর্তা বেতের তৈরি শীতল পাটি কিংবা অন্যান্য জাতের সকল প্রকার পাটি গরমের দিনে বিছানার উপর ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া হিন্দু সম্প্রদায়ের নানা অনুষ্ঠান- যেমন বিয়ে, অন্নপ্রাশন, শ্রাদ্ধে নতুন পাটির ব্যবহার অপরিহার্য। হিন্দু বিবাহে কন্যাদানের সময় পিতা-মাতা অন্যান্য নানা সামগ্রীর সাথে একখানা শীতলপাটি বা নকশি করা রঙ্গিন পাটি উপহার দিয়ে থাকেন। মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনও পারিবারিক কাজে শীতল পাটি ব্যবহার করে থাকেন।

জানা যায়, একসময় দাসেরবাজারের তৈরি রূপালী বেতের শীতল পাটি নবাব মুর্শিদকুলী খাঁ সম্রাট আওরঙ্গজেবকে উপহার দিয়েছিলেন। এসব পাটি ধনী-গরিব সবাই স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহার করতেন, যা স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশবান্ধব।

স্থানীয় তালিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান বিদ্যুৎ কান্তি দাস বলেন, ‘এখানে আদিকাল থেকে পাটি তৈরি হচ্ছে। ৫ থেকে ৭ বছর ধরে এর কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। আগে এক সপ্তাহে একটি পাটি তৈরি ৮শ’-১ হাজার বিক্রি করলে সংসার চলত। এখন ২ হাজার টাকা বিক্রি না করলে পোষায় না। কিন্তু মানুষ ২ হাজার টাকা দিয়ে কিনতে চায় না। এছাড়া চাহিদা অনুযায়ী মূর্তা পাওয়া যায় না। চড়া দামে বেত কিনতে হয়। কিন্তু বিক্রি করতে হয় কম দামে। এই জন্য পাটি তৈরিতে মানুষ নিরুৎসাহিত হয়েছেন। হাতেগোনা কিছু মানুষ তৈরি করেন। সরকারি ভর্তুকির ব্যবস্থা করলে মানুষ এ কাজে আবার ফিরবে।’

বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম আল ইমরান বলেন, ‘এই দেশীয় শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে যতখানি সহযোগীতা দরকার তা দেয়া হবে। তাদের সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করে দেয়ার পাশাপাশি পণ্যগুলো বাজারজাত করার ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। যাতে শীতল পাটির ন্যায্য মূল্য পায় তারা।’


আরো সংবাদ পড়ুন...
Developed By Radwan Ahmed