কমলকন্ঠ রিপোর্ট ।। আজ শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বরেণ্য রাজনীতিবিদ, সিলেটের কৃতিসন্তান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য, সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী । খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ এম সাইফুর রহমান ২০০৯ সালের এই দিনে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন।
বৃহত্তর সিলেটের এ কৃতিসন্তান তাঁর জীবদ্দশায় সিলেটের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। জাতীয় সংসদে ১২ বার বাজেট পেশ করে জাতীয় রাজনীতির ইতিহাসে তিনি অমর হয়ে আছেন। তাঁর মৃত্যুর ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও সিলেটের মানুষ এখনও তাঁর অভাব অনুভব করেন। সিলেট অন্তঃপ্রাণ এ কৃতী ব্যক্তিত্ব ১৯৩২ সালের ৬ই অক্টোবর মৌলভীবাজারের বাহারমর্দন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী ছিলেন তিনি। রাজনীতিতে সম্পৃক্ত না থাকলেও ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে ভাষা আন্দোলনে অংশ নেয়ায় তাকে জেল খাটতে হয়। স্বাধীনতা উত্তরকালে জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভায় বাণিজ্য উপদেষ্টা হিসেবে রাজনীতিতে তাঁর অভিষেক ঘটে। পরবর্তীতে বাণিজ্য ও অর্থমন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান তিনি। জিয়াউর রহমানের পুরো সময় তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯০ সালে স্বৈরাচার পতনের পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এম সাইফুর রহমান আবারো অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ১৯৯৬ সালে তিনি মৌলভীবাজার-৩ আসন থেকে নির্বাচিত হলেও নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে সংসদীয় আসনে বিজয়ী হলে তিনি বিরোধী দলীয় সাংসদ হন। ২০০১ সালে তিনি সিলেট-১ ও মৌলভীবাজার-৩ আসনে যুগপৎ নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি মৌলভীবাজারের আসনটি ছেড়ে দিয়ে জাতীয় সংসদের মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ আসনের প্রতিনিধিত্ব করেন।
২০০১ সালের চার দলীয় জোট সরকারের মন্ত্রিসভায় তিনি আবারো অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ও মন্ত্রিভার সিনিয়র মন্ত্রী হিসেবে তিনি দেশের অর্থনীতি ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এ সময় তিনি তাঁর নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে অবদান রেখে স্থানীয়দের ব্যাপক সহানুভূতি অর্জনে সক্ষম হন। তিনি সিলেটের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে সফল উন্নয়নযজ্ঞের সূচনা করেন বলে জনশ্রুতি আছে। ক্ষমতায় থাকাকালে সিলেটের ব্যাপক উন্নয়নের জন্য তিনি দেশের অন্যান্য জেলা ও সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সমালোচনার মুখে পড়েন।
এম সাইফুর রহমানের আপসহীন উন্নয়ন কর্মকান্ডে সিলেটের আপাময় মানুষের মধ্যে ব্যাপক সহানুভূতি জন্ম দেয়। একনেকের বিকল্প চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি সিলেটের অসংখ্য প্রকল্প একনেকে পাশ করিয়ে সিলেটবাসীর হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। তাঁর সহজ সরল অভিব্যক্তি ও সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলায় সর্বস্তরের মানুষ তাকে আপনজন হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছিল। বিরল কৃতিত্বের অধিকারী এম সাইফুর রহমান ছিলেন বিলেতে চার্টার্ড একাউন্টেন্ট।
২০০৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সিলেট সফর শেষে ঢাকায় ফেরার পথে বেলা পৌনে ৩টায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের খড়িয়ারা নামক স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাকে বহনকারী গাড়িটি রাস্তা থেকে ছিটকে পাশের একটি খাদে পড়ে পানিতে তলিয়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর আকস্মিক মৃত্যুতে বৃহত্তর সিলেটসহ পুরো দেশে শোকের ছায়া নেমে আসে। তার শেষ ইচ্ছানুযায়ী বাহারমর্দন গ্রামে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
এ ক্ষণজন্মা পুরুষের একাদশ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠন, এম সাইফুর রহমান স্মৃতি পরিষদ মৌলভীবাজার ও মরহুমের পরিবারের পক্ষ থেকে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে সকাল ১০টায় মৌলভীবাজারে মরহুম এম. সাইফুর রহমানের কবর জিয়ারত। মিলাদ মাওফিল ও সামাজিক দূরত্ব মেনে দলীয় কার্য্যালয়ে আলোচনা সভা।
মরহুমের কবর জিয়ারতে অংশগ্রহণের জন্য জেলা বিএনপির দ্বায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ সকল নেতাকর্মীকে অনুরোধ জানিয়েছেন।