Logo

চলে গেলেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আব্দুন নূর মাষ্টার

রিপোটার : / ১২৯০ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশিত : বুধবার, ২৬ আগস্ট, ২০২০

image_pdfimage_print

কমলকন্ঠ রিপোর্ট।।

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের গোপীনগর নিবাসী মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুন নূর মাষ্টার আর নেই।

মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) রাত সাড়ে ১১টায় বার্ধক্যজনিত রোগে নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। তিনি স্ত্রী, ৪ ছেলে, ১ মেয়ে, নাতি-নাতনীসহ অসংখ্য আত্মীয় স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

বুধবার (২৬ আগস্ট) বিকাল ৩টায় গোপীনগর বেলনী ফুটবল মাঠে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তার জানাযার নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।

আব্দুন নূর মাষ্টারের মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ এমপি, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. রফিকুর রহমান, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আছলম ইকবাল মিলন, বিআরডিবির সাবেক চেয়ারম্যান ইমতিয়াজ আহমদ বুলবুল, কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. জুয়েল আহমদ, রহিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমদ বদরুল, পতনঊষার ইউপি চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার তওফিক আহমদ বাবু, কমলগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি বিশ্বজিৎ রায়, কমলগঞ্জ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি এম,এ ওয়াহিদ রুলু, সাংবাদিক সমিতি কমলগঞ্জ ইউনিটের সভাপতি নুরুল মোহাইমিন মিল্টন, মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি সুব্রত দেবরায় সঞ্জয়, কমলগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি পিন্টু দেবনাথ ও জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা কমলগঞ্জ ইউনিটের আহবায়ক আমিনুল ইসলাম হিমেল সহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও বাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার এই আলোকিত ব্যক্তিত্ব এক বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী ছিলেন । কমলগঞ্জের যেসব সোনার ছেলেরা সমাজ বদলের স্বপ্নকে বুকে লালন করে উনসত্তরের গন অভ্যুত্থান থেকে ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন পর্যন্ত জনগণের প্রতিটি ন্যায় সংগত লড়াইয়ে নেতৃত্বের ভূমিকায় ছিলেন আব্দুর নূর মাষ্টার ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম একজন । সবক’টি আন্দোলনে তার উদ্যোগ উদ্যম ছিল সর্বজন বিদিত। আব্দুর নূর মাষ্টার মাষ্টার যখন কুলাউড়া কে, সি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র তৎকালীন সময়ে এই এলাকা ছিল বাম রাজনীতির ও আন্দোলনের ঘাঁটি। আব্দুর নূর মাষ্টার ছিলেন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)র ছাত্র সংগঠনের নেতা। তরুণ বয়সেই সমাজ রাজনীতির হাতেখড়ি নেওয়ায় বেগম মতিয়া চৌধুরী, কাজী জাফর আহমদ, হায়দার আকবর খান রনো প্রমুখ দেশবরেণ্য প্রগতিশীল রাজনীতিবিদদের সংস্পর্শে আসার সুযোগ হয়েছিল তার।

ঐতিহাসিক হাওর করাইয়ার কৃষক আন্দোলনে প্রয়াত আবু কায়সার খান, কুলাউড়া রাজা সাহেব, মফিজ আলী, সৈয়দ মতিউর রহমান, তারা মিয়া ও বীর কটু মিয়া প্রমুখ ব্যক্তিবর্গের সাথে তিনি ও সেই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। স্বৈরাচার আইয়ুব সরকার বিরোধী আন্দোলন ও ১৯৬৯ এর দেশব্যাপী গণ আন্দোলনের ঢেউ যখন কমলগঞ্জ উপজেলায় এসে লেগেছিল। তখন মৃত ইলিয়াছুর রহমান চৌধুরী এমপি সাহেবের নেতৃত্বে কমলগঞ্জের বিভিন্ন আন্দোলনে মৃত আব্দুল গফুর (নেতা গফুর), বাবু সত্যেন্দ্র মোহন দেব, মৃত গোলজার আহমদ খান, মৃত জহির উদ্দিন চৌধুরী, মৃত ওমর আলী, মৃত সফিকুর রহমান চৌধুরী,মৃত আব্দুল মছব্বির মাস্টার প্রমুখের সাথে আব্দুর নূর মাষ্টারও ছিলেন সামনের সারিতে নেতা। ১৯৭১ সালের শুরু থেকেই যখন বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম সুনির্দিষ্ট রূপ লাভ করতে থাকে তখন ছাত্র সমাজকে সেই ধারায় সংগঠিত ও সমাবেশ ঘটানোর জন্য এ উপজেলায় যে ক’জন প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন আব্দুর নূর মাষ্টার তাদের মধ্যে অন্যতম একজন। দিনে চাকরি ও রাতে মুক্তি বাহিনীকে সংগঠিত করার কাজে নিয়োজিত ছিলেন তিনি। গোপনে সৈয়দ শামছুজ্জাম, ললিত মোহন দাস, প্রমোদ রঞ্জন দাস, উস্তার মিয়া মাস্টার, তৈয়ব উল্যা, ইয়াছিন মিয়া, এডভোকেট আব্দুস ছোবান, ইমান আলী প্রমুখ ব্যক্তিবর্গকে সংগঠিত করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণের প্রস্তুতি নেন তিনি।

ভারতে ট্রেনিং নিয়ে সৈয়দ মহসীন আলীর নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী এলাকায় প্রবেশ করলে তিনি প্রথমে তাদের গোপিনগরের আরজু মিয়া সাবের বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। পাক বাহিনী খবর পেয়ে আরজু মিয়া সাবের বাড়ি জ্বালিয়ে দিলে তিনি তাদের পালপুর গ্রামের আব্দুল আহাদ চৌধুরী সফিক মিয়া সাহেবের বাড়ীতে নিয়ে যান। সেখানে থেকে তার সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন এলাকায় একাধিক অপারেশন চালিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে মুন্সীবাজার পাঞ্জাবী ক্যাম্পে হানা দেওয়ার উদ্দেশ্যে সৈয়দ মতিউর রহমান ভারত থেকে প্রায় ২০০ মুক্তি বাহিনী ও শিখ সৈন্য নিয়ে পালপুরে এসে তাদের সাথে যোগ দেন। অপারেশনের পরিকল্পনা নিয়ে নির্দিষ্ট দিনে মুন্সীবাজার পাঞ্জাবী ক্যাম্পে চতুর্দিক থেকে সাড়াশি আক্রমণ চালানো হয়। টানা ২ দিন যুদ্ধের পর পাকবাহিনীর কিছু সৈন্য শমশেরনগর দিকে পালিয়ে যায়। বাকীরা আত্মসমর্পণ করে, শত্রু মুক্ত হয় পাক এই এলাকা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মৌলভীবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলার সকল মুক্তিযোদ্ধারা জমায়েত ও সৌজন্য অনুষ্ঠানে এক মাইন বিস্ফোরণে আব্দুন নূর মাষ্টার গুরুতর আহত হন। সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনার ক্ষত চিহ্ন তিনি বয়ে বেড়িয়েছেন মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত। পাক-হানাদারদের দোসর কর্তৃক এলাকার লোকজনের বাড়িঘর থেকে লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধারেও তার প্রশংসনীয় ভূমিকা ছিল।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ১৯৭২ সাল থেকে হিংসা লোভ আর ক্ষমতার মোহ কোন দিনও তাকে গ্রাস করতে পারেনি ।তিনি আওয়ামী রাজনীতিতে যোগ দেন এবংসমাজ কর্মের প্রতি অধিকতর মনোযোগী হয়ে উঠেন।

১৯৫০ সালে জানুয়ারি মাসে কমলগঞ্জ উপজেলার পতন ঊষার ইউনিয়নের গোপীনগর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে আব্দুর নূর মাষ্টার সাহেবের জন্ম। পিতা মরহুম মোহাম্মদ আমিল মাস্টার মাতা মরহুম নেকজান বিবি ,৭ ভাই বোনের মধ্যে সর্ব কনিষ্ঠ ছিলেন তিনি।

পেশাগত জীবনে একজন আদর্শ শিক্ষক হিসাবে যেমন তার ছিল সুখ্যাতি তেমনি সমাজ জীবনেও একজন নিঃস্বার্থ ও নীতিমান সমাজকর্মী হিসাবে তিনি সর্মহলে পরিচিত ছিলেন । বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এই মানুষটির অকাল প্রয়ানে কলগঞ্জের যে ক্ষতি হলো তা কোন ভাবেই পূরণ হবার নয়।


আরো সংবাদ পড়ুন...

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
৩১  
Developed By Radwan Ahmed