কমলকন্ঠ রিপোর্ট ।। ২৭ দিন ধরে বন্ধ থাকা মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে বন্ধ দলই চা বাগান খোলার ও চেয়ারম্যানসহ চা শ্রমিকদের ওপর করা হয়রানীমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আজ সড়ক অবরোধ কর্মসূচী পালন করেছে বাগানের চা শ্রমিকরা। প্রায় ১৫ কিলোমিটার দুর থেকে ৪ ঘন্টা ধরে পায়ে হেটে ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে এসে তিন শতাধিক চা শ্রমিক প্রায় দেড় ঘন্টা উপজেলা সদরের প্রধান সড়ক অবরোধ করে রাখে । অবরোধের কারনে শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে।
পরে সেখান থেকে চা শ্রমিকরা উপজেলা প্রশাসনিক কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেয়। সেখানে বেশ কয়েক ঘন্টা অবস্থানের পর ইউএনও‘র আশ্বাসে চা শ্রমিকরা বাগানে ফিরে যেতে রাজি হন।
উল্লেখ্য যে,বন্ধ দলই চা বাগান চালুর বিষয় নিয়ে গত ১৯ আগষ্ট বাগান ম্যানেজমেন্টের সাথে শ্রমিকরে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় ২২ আগস্ট স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, চা শ্রমিক নেতাসহ ১৩ জন চা শ্রমিকের নামে মারপিট, গাড়ি ভাঙ্গচুর ও টাকা ছিনাইয়ের অভিযোগে থানায় মামলা করেন দলই চা বাগান কোম্পানীর এজিএম খালেদ মঞ্জুর খান। এই মামলার প্রতিবাদে ও বাগান চালুর দাবীতে কমলগঞ্জ উপজেলা থেকে প্রায় ১৮ কি.মি.দূরের দলই চা বাগান শ্রমিকরা আজ সোমবার সকাল ১০টায় পায়ে হেঁটে মিছিল সহযোগে রওয়ানা দিয়ে দুপুরের পর কমলগঞ্জ উপজেলায় চৌমুহনায় পৌঁছায়।
সেখানে নারী শ্রমিক নেত্রী গীতা রানী কানুর নেতৃত্বে শ্রমিকরা দেড়ঘন্টা সড়ক অবরোধ করে রাখে ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এরপর তারা উপজেলা প্রশাসনের সম্মুখে অবস্থান নেয়।
এসময় সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে চা শ্রমিক নেত্রী গীতা রানী কানু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,দলই চা বাগান কর্তৃপক্ষ বেআইনীভাবে গত ২৭ জুলাই বাগান বন্ধ করেছে। শুধু তাই নয় মালিক পক্ষ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মামলা দিয়ে শ্রমিকদেরকে হয়রানি করছে। যা কোনভাবেই কাম্য নয়। দীর্ঘদিন ধরে চা বাগান শ্রমিকদের অনাহারে- অর্ধাহারে দিনযাপনের অভিযোগ তুলে তিনি অবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও দলই চা বাগান চালুর দাবি জানান।
বাগান শ্রমিক পঞ্চায়েত কমিটির সম্পাদক সেতু রায় বলেন, গত ২৮ দিন যাবৎ কমলগঞ্জের দলই চা-বাগান বন্ধ। এরই ভেতর ‘এজিএম কর্তৃক দুই নারী চা-শ্রমিক লাঞ্চিত হয় গত ১৯ আগস্ট। দুই নারী শ্রমিককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ নিয়ে থানায় যান চা-শ্রমিকরা। কিন্তু কমলগঞ্জ থানা কর্তৃপক্ষ মামলাটি নেয়নি । উল্টো পুলিশ বলেছে আমরা কারো মামলা নেবো না। এই বলে আমারে ফেরত পাঠিয়েছে। অথচ শনিবার রাতে শুনলাম চা-শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।’
মামলার আসামি চা-শ্রমিক নেতা ও মাসিক চা মজদুর সম্পাদক সীতারাম বীন বলেন, ‘ঘটনার দিন সকালে দলই চা-বাগানের সহকারী মহাব্যবস্থাপক এ মামলার বাদী খালেদ মঞ্জুর খান বাগানের দুই নারী চা-শ্রমিককে লাঞ্চিত করায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ইট-পাটকেল মেরে জিপ গাড়ির কাঁচ ভেঙেছে। এর চেয়ে বেশি কোনো ঘটনা ঘটেনি। এখন যাতে অনাহারে থাকা চা-শ্রমিকদেরকে অর্থ ও খাদ্য সহায়তা না দিতে হয়, সেজন্য ঘটনার দুই দিন পর পরিকল্পিতভাবে মামলা সাজিয়েছেন বাগান কর্তৃপক্ষ । অথচ ঘটনার পর লাঞ্চিত নারী চা-শ্রমিকরা কমলগঞ্জ থানায় গিয়ে অভিযোগ দিলেও থানা সে অভিযোগ গ্রহণ করেনি।’
তবে কমলগঞ্জ থানার ওসি মো. আরিফুর রহমান মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘এ মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে কমলগঞ্জ থানার এসআই সিরাজুল ইসলামকে।’ শ্রমিকদের মামলা না নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তা অস্বীকার করে ওসি বলেন, ‘এই অভিযোগ মিথ্যা। তারা অভিযোগ নিয়ে আসেনি।’