কমলকন্ঠ রিপোর্ট ।।
মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা একটি নৈসর্গিক লীলাভূমি। এই উপজেলার সকল ধর্ম ও বিভিন্ন জাতি-উপজাতির মধ্যে রয়েছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও মিলেমিশে বসবাসের অনন্য সংস্কৃতি। মনিপুরী সম্প্রদায় হচ্ছে কমলগঞ্জ উপজেলার এক সমৃদ্ধ সম্প্রদায়। শিক্ষা, কৃষি ও জ্ঞানে তারা বহুদুর এগিয়ে গিয়েছে। প্রত্যেকের শ্রম ও চেষ্টায় কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে তাদের বেশি সময়ক্ষেপণ করতে হচ্ছে না। এমনকি এরই মধ্যে তারা প্রধান বিচারপতির পদ ও অলঙ্কৃত করেছে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষকসহ সরকারি-বেসরকারি চাকুরীর সকল ক্ষেত্রে তাদের রয়েছে আধিক্যতা।
নিজের হাতে সুতা বুনে সুন্দর সুন্দর জামা তৈরি করা মনিপুরী নারীদের একটি ঐতিহ্যবাহী প্রথা। এই প্রথা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আজ আরো বিস্তৃতি লাভ করেছে। সাথে যুক্ত হয়েছে হ্যান্ডপেইন্ট। সহজে কাস্টমারের নিকট পণ্য উপস্থাপন ও বিক্রি করতে গড়ে উঠেছে অনলাইন শপ।
ডিজিটাল এই যুগে ইন্টারনেটের ব্যাপক ব্যবহারে সবকিছু সহজতর হয়ে গেছে। ফেসবুকের মাধ্যমে যেমন হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থার সহজলভ্যতা তেমনি গড়ে উঠেছে অনলাইন ভিত্তিক নানান শপ। ফেসবুকের বদৌলতে ‘chanu’র সাথে প্রথমে পরিচিত হই।
‘চানু’ হচ্ছে একটি অনলাইন শপ। যেখানে ফেব্রিক রিলিটেড সব ধরনের কাজ করা হয়। অনলাইন ভিত্তিক এই শপের পরিচালনাকারী হচ্ছেন কমলগঞ্জ উপজেলার হকতিয়ারখলা গ্রামের সর্বজন পরিচিত শ্রীলক্ষী কমার্শিয়াল ইন্সটিটিউট এর প্রিন্সিপাল বিধু ভূষণ সিংহের দুই যমজ মেয়ে মৌলী ও বৌলী। দু’বোন সিলেটের স্বনামধন্য স্কলার্সহোম স্কুলে শিক্ষকতা করেন। তারা বর্তমানে আধুনিক নগরী সিলেটের বাসিন্দা।
‘চানু’র শুরু ও সফলতার গল্প সম্পর্কে মৌলী ও বৌলী জানান, ‘স্কুল কলেজ পড়াকালীন সময় থেকে হাতের কাজ করতাম কিন্তু শুধুমাত্র নিজেদের এবং পরিচিত মানুষদের জন্য করতাম। শখে আর ভালো লাগতো বলেই করতাম। কখনো ‘ব্যবসা’ করবো তা ভাবিনি বা ওই চিন্তা থেকে কাজগুলো করিনি।
আমাদের কাজ দেখে কারো ভালো লাগলে আর বললে করে দিতাম। কিন্তু কখনো হ্যান্ডপেইন্টের কাজ করা হয় নাই তখন। মাস্টার্স পরীক্ষার পরই একটা স্কুলে চাকুরী পাই। অবসর সময়ে ছবি আঁকাআঁকি করতাম,ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকতাম। আসলে শুরুটা হঠাৎ করেই হয়েছে।’
তারা বলেন- কখনো ভাবিনি এখন যতটুকু যা করছি তাও করতে পারবো। কাগজে আঁকা ছবিগুলো কাপড়ে আঁকা যায় কিনা ওই চিন্তা থেকেই কাপড়ে আঁকার কাজ শুরু করি। কাজ শুরু করার সময় হ্যান্ড পেইন্ট এর কাজ সম্পর্কে কোন আইডিয়া ছিল না। বুঝতাম না কোন কাপড়ে আঁকা যায়, কোন রং কোন কাপড়ে ব্যবহার করতে হয়। প্রথমে নিজের কিছু ড্রেসে আঁকা শুরু করলাম। পরে যখন আমাদের কাজ মানুষের ভালো লাগতে শুরু হলো তখন ছোট ভাইয়ের আইডিয়ায় পেইজ খোলা ‘চানু’ নামে। ‘চানু’ মনিপুরী শব্দ যার বাংলা অর্থ হচ্ছে কন্যা বা মেয়ে।’
তারা আরও বলেন- ‘আমরা সাধারণত ফেব্রিক রিলেটেড সব কাজ করে থাকি। যেমন- শাড়ি, সেলোয়ার কামিজ, পাঞ্জাবি, বাচ্চাদের ড্রেস, ওয়ালমেট, পেইন্টেড কিছু গয়না। যদিও গয়নার কাজ বেশি করা হয় না।’
তারা বলেন- বর্তমানে ‘চানু’র অবস্থা খুব ভালো। যতটুকু না ভেবেছিলাম এর চেয়ে অনেক বেশি ভালো। অনেক সাড়া পাই আর পাচ্ছি। ‘চানু’ প্রতিষ্ঠার এই ছয় বছরে দেশ ও দেশের বাইরে থেকেও অনেক অর্ডার পাচ্ছি। এই হিসেব কষলে অনেক ভালো অবস্থা। লাভ ক্ষতি ওই ভাবে বলার চেয়ে বলবো আমরা আমাদের কাজ যেহেতু নিজে করছি (অন্য কোন মাধ্যম ইউজ করি না) তাই আমরা শুধু কাজ বুঝে কাজের মূল্যটা পাচ্ছি। মানুষ পছন্দ করে আর সেটাই বেশি ভালো লাগছে।’ চানুর সাথে আমরা তিনজন জড়িত। আমরা দুই বোন আর কাজিন লাবন্তী ‘