কমলকন্ঠ রিপোর্ট ।।
বন বিভাগ ও বিদ্যুৎ বিভাগের রশি টানাটানিতে আজও বিদ্যুৎ সুবিধা পায়নি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর বনবিট এলাকার ২টি গ্রাম । আজ শনিবার দুপুর ১২টায় বিদ্যুতায়নের দাবীতে দুইগ্রামের বাসিন্দারা আদমপুর -কালিঞ্জীপুঞ্জি সড়কে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।
উল্রেখ্য যে, গত ১২ ফেব্রুয়ারি গণ ভবন থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জাতীয়ভাবে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা করলেও এ উপজেলার আদমপুর বনবিট এলাকার কালেঞ্জী খাসিয়াপুঞ্জি ও তৎসংলগ্ন কালেঞ্জী গ্রাম এখনও বিদ্যুতায়নের আওতায় আসেনি। বন বিভাগের সীমানা চিহ্নিত করন জরিপ সম্পাদনের আপত্তির কারণে এ দু’টি গ্রামে বিদ্যুতায়ন সম্ভব হয়নি । এ নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর আবারও বনবিভাগ জরিপ কাজ শুরু করে। গত মার্চ মাসে বন বিভাগ জরিপ কাজ ও সর্ব শেষ সরেজমিন তদন্তের কাজ শেষ করে। এ জরিপ কাজ শেষ হওয়ার প্রায় ত মাস অতিবাহিত হওয়ার পর আজ শনিবার (৪ জুলাই) সকাল থেকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কালেঞ্জী পুঞ্জিতে বিদ্যুতায়নের কাজ শুরু করলে বন বিভাগের লোকজন এসে সে কাজে বাঁধা সৃষ্টি করে। এঘটনার প্রতিবাদে আজ দুপুরে কালেঞ্জী খাসিয়া পুঞ্জির ৯৫ পরিবারের সদস্য ও তৎসংলগ্ন কালেঞ্জী গ্রামের ৫০ পরিবারের দুই শতাধিক নারী পুরুষের অংশ গ্রহনে আদমপুর কালিঞ্জীপুঞ্জি সড়কে প্রতিবাদসভা ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
কালিঞ্জী পুঞ্জির হেডম্যান রিটেঙেন খেরিয়াম-এর সভাপত্বিতে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন,পুঞ্জির সহকারী হেডম্যান উয়াংবর সুটিং ,সাবেক হেডম্যান নাইট খেরিয়েম,সামায়ের খেরিয়াম প্রমুখ। এসময় বক্তারা বলেন, সম্প্রতি কমলগঞ্জ উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুয়ায়িত ঘোষনা করা হলে ও আমরা কমলগঞ্জের বাসিন্দার বিদ্যুৎ সংযোগ পাইনি। তাই অতিশ্রীঘই আমাদের এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার দাবী জানাচ্ছি। অন্যতায় আমরা বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবো।
পুঞ্জি হেডম্যান রিটেঙেন খেরিয়াম বলেন, বিদ্যুৎ ও রাস্তাঘাটের সমস্যার কারণে আমাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কমলগঞ্জে লাউয়াছড়া ও মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকলেও বন বিভাগ অহেতুক কালেঞ্জী খাসিয়া পুঞ্জির বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপনে বাঁধা দিয়েছে।
আদমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদাল হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী কালেঞ্জী খাসিয়া পুঞ্জি ও তৎসংলগ্ন গ্রাম বিদ্যুতায়নের আওতায় আসতে হবে। গত মার্চ মাসে বন বিভাগ সর্ব শেষ সরেজমিন তদন্ত করেছে। শনিবার বিদ্যুৎ বিভাগ আবার কালেঞ্জী খাসিয়া পুঞ্জি ও সাথের গ্রামে বিদ্যুতায়নের কাজ শুরু বন বিভাগ বাঁধা সৃষ্টি করে। যাহা সম্পূর্ণরুপে অযোক্তিক।
আদমপুর বনবিট কর্মকর্তা শ্যামল রায় বলেন, কালেঞ্জী খাসিয়া পুঞ্জিও গ্রামে বিদ্যুতায়নের জন্য ইতিপূর্বে বন বিভাগ একটি জরিপ সম্পন্ন করলে বিদ্যুতায়ন কাজ শুরুর করার সম্পর্কে তার কাছে বন বিভাগের কোন নির্দেশনা আসেনি। তাই তিনি আপাতত কাজটি বন্ধ রাখতে বিদ্যুৎ বিভাগকে বলেছেন।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী আশেকুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় কমলগঞ্জে শতভাগ বিদ্যুৎ নিশ্চিত হলেও কালেঞ্জী খাসিয়া পুঞ্জি ও তৎসংলগ্ন একটি গ্রাম বিদ্যুৎ সুবিধার বাহিরে রয়েছে। বন বিভাগের বাঁধা ঘটনাটি উল্লেখ্য করে তিনি বলেন বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন।
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কমলগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের ডিজিএম প্রকৌশলী গণেশ চন্দ্র দাশ বলেন, কালেঞ্জী খাসিয়া পুঞ্জি ও কালেঞ্জী গ্রামকে বিদ্যুতায়নের আওতায় আনতে কাজ শুরু হয়েছিল। ঠিকাদারের লোকজনও খাসিয়া পুঞ্জি এলাকায় বৈদ্যুতিক খুটিও এনে রাখে। শুধুমাত্র বন বিভাগের আপত্তির কারণে এ দুটি গ্রামকে এখনও বিদ্যুতায়নের আওতায় আনা যায়নি। এ নিয়ে মাস ৩ আগে বন বিভাগ জরুরীভাবে জরিপও করেছে। তা হলে কেন তারা এখনও বাঁধা প্রত্যাহার করছে না তা বোঝা যাচ্ছে না। শতভাগ বিদ্যুৎ নিশ্চত করতেই শনিবার থেকে ঠিকাদারের লোকজন আবার বিদ্যুতায়নের কাজ শুরু করলে বনবিভাগ সে কাজে বাঁধা দেয়।