কমলকন্ঠ রিপোর্ট ।।
দেশে বিদেশে বসবাসরত সিলেট বিভাগের মানুষ দীর্ঘ দিন থেকে সিলেট-ঢাকা রেল পথের উন্নয়নের দাবী জানিয়ে আসছিলো। সংস্কারহীন জরাজীর্ণ এই রেল পথে বার বার দুর্ঘটনায় প্রাণ ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হচ্ছে।
এমতাবস্থায় এই রেল লাইনের উন্নয়নের জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন গত ২০১৯ সালের ১৮ জানুয়ারি রেলপথমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন বরাবর ডিও লেটার দেন। এতে তিনি গুরুত্ব বিবেচনায় সিলেট-ঢাকা এবং সিলেট-চট্টগ্রাম রেলপথের সংস্কার, উন্নয়ন ও নতুন রেল দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন।
সর্বশেষ গত ২০১৯ সালের ২৩ জুন রেল যোগাযোগের অবস্থা করুণ জানিয়ে দ্বিতীয় দফায় সংশ্লিষ্ট এই মন্ত্রণালয়ে ডিও লেটার দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ দিন রাতেই সিলেট রেলপথে ঘটল ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা।
বৃহত্তর সিলেট একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অঞ্চল বিবেচনায় সরকার আখাউড়া-সিলেট রেলপথকে ডুয়েল গেজ করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। জানা যায় ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ এবং ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে।
যে কোন সময় কাজ শুরু করার কথা। এই সংবাদে বৃহত্তর সিলেটের মানুষ আশায় বুক বেধে ছিলো এই ভেবে যে তাদের স্বপ্নপূরণ হতে চলেছে। সিলেটবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবী আখাউড়া-সিলেট রেলপথ উন্নয়ন শুরুর মূখে আবারো মুখ থুবড়ে পড়ল। এমতাবস্থায় একটি মহল প্রকল্পটিকে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ফেলতে চাচ্ছে এমন খবরে সিলেটবাসীর মনে চরম হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।স্বার্থান্বেষী মহলের অপতৎপরতায় এই অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে বলে সিলেটবাসী মনে করছে।
গত বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) সকাল ১১টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক মো: আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে এনিয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বাংলাদেশ রেলওয়ের আখাউড়া-সিলেট সেকশনে বিদ্ধমান মিটারগেজ রেল লাইনকে রূপান্তর করে ডুয়েল গজ রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়।
জানা যায়, সভায় আখাউড়া-সিলেট সেকশনে বিদ্ধমান মিটারগেজ রেল লাইনকে রূপান্তর করে ডুয়েলগজ রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে ৯টি প্রশ্ন তোলা হয়। যেমন, ডুয়েলগেজ করার প্রয়োজনীয়তা আছে কি? এই প্রকল্প বাস্তবায়ন কালে ট্রেন চলাচল কীভাবে সচল রাখা হবে? নতুন করে কীভাবে জমি অধিগ্রহণ করা হবে? জমির মূল্য এত মূল্য কেন? বিদ্ধমান মিটারগেজ রেল লাইনকে সংস্কার করলে কি হয় না ইত্যাদি।
প্রকল্পের কাজ শুরু করার সময় এমন প্রশ্ন উত্থাপন করায় সিলেটবাসী মনে প্রশ্ন, এই প্রকল্পটিকে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কিনা?
বিষয়টি নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, এই মুহূর্তে এসব প্রশ্ন অবান্তর। সব কিছু ঠিকটাক হয়ে গেছে এখন কাজ শুরু করার কথা। তিনি বলেন, বৃহত্তর সিলেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল। দেশের অর্থনীতিতে এই সিলেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়নে পাশাপাশি দীর্ঘদিন যাবৎ অবহেলিত এই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরী।
কেউ কেউ আশংকা প্রকাশ করে বলছেন, আখাউড়া-সিলেট ডুয়েলগজ রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্পটি কী শেষ পর্যন্ত ‘ঢাকা-সিলেট ছয় লেন প্রকল্পের’ ন্যায় ভাগ্য বরণ করতে যাচ্ছে। তারা বলছেন আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং একটি স্বার্থান্বেষী মহলের অপতৎপরতার কারণে হয়তো এই প্রকল্পটিও মূখ থুবড়ে পড়বে।
উল্লেখ্য যে, চীনের অর্থায়নে জিটুজি ভিত্তিতে এ মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার জন্য ২০১৭ সালের অক্টোবরে চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছিল সরকার। কথা ছিল ২০১৮ সালের শুরুতেই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।
হঠাৎ করে মহাসড়ক সচিব নজরুল ইসলাম খান জানালেন তাকে নাকি ৫০ লাখ টাকা ঘুষ দিতে চেয়েছে চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানী।
তাদের একজন প্রতিনিধি দেখা করতে আসেন সচিব নজরুল ইসলাম খানের সাথে । এসময় তাকে নাকি ৫০ লক্ষ টাকা ঘুষ অফার করা হয়েছিলো। চীনা দূতাবাস পরে এ ধরণের অভিযোগে কথা অস্বীকার করে।
পরবর্তিতে এই বিষয়টি নিয়ে মুখরোচক আলোচনার সৃষ্টি হয়। তারা বলেন, চুক্তি স্বাক্ষরের পর কেন চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানী মহাসড়ক সচিব নজরুল ইসলাম খানকে ঘুষ প্রদান করতে চাইবে।
কথিত এই ঘুষ সাধার অপরাধে চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানীকে আর কাজ দেয়া হলো না।
পরবর্তিতে এগিয়ে আসে এশিয় উন্নয়ন ব্যাংক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সাথে সাক্ষাত করেন এডিবির বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন পারকাশ। তারা এই প্রকল্পে অর্থ ছাড়ে সম্মত হয়। বর্তমানে এটিও আমলাতন্ত্রিক জটিলতার জালে আটকে আছে বলে জানা গেছে।
সিলেটের সাধারণ মানুষ ‘আখাউড়া-সিলেট’ রেলপথ ডুয়েলগেজ এবং সিলেট-ঢাকা ৬ লেন মহাসড়ক প্রকল্প দুটি নিয়ে এমন ঢালবাহানায় চরমভাবে ক্ষুব্ধ। তারা এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, এই সব দাবী দাওয়া পূরণে স্থানীয়ভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বৃহত্তর সিলেটের সকল মন্ত্রী এবং এমপিদের আরো জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। তা হলেই সকল যড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে এই প্রকল্পগুলো আলোর মুখ দেখবে। এদিকে বৃটেন থেকে গ্রেটার সিলেট ডেভেলপমেন্ট এন্ড ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল ইন ইউকে সাউথ ওয়েলসের সাবেক চেয়ারপার্সন মৌলভীবাজার জেলার সাবেক ছাত্রনেতা কমিউনিটি লিডার সাংবাদিক মোহাম্মদ মকিস মনসুর. গ্রেটার সিলেট কাউন্সিল ইন ইউকের সাউথ ওয়েলস চেয়ারপার্সন মোহাম্মদ আসকর আলী. সাধারণ সম্পাদক শাহ শাফি কাদির ও ট্রেজারার এবি রুনেল সহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ এক যুক্ত বিবৃতিতে সিলেটবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবী আখাউড়া-সিলেট রেলপথ উন্নয়ন শুরুর মূখে আবারো মুখ থুবড়ে পড়ার সংবাদে তীব্র প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে স্বার্থান্বেষী মহলের অপতৎপরতায় এই প্রজেক্ট অনিশ্চয়তার মূখে সিলেটবাসী কোনো অবস্থাতেই মেনে নিবে না। বৃহত্তর সিলেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল। দেশের অর্থনীতিতে এই সিলেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়নে পাশাপাশি দীর্ঘদিন যাবৎ অবহেলিত এই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরী।তাই এই প্রজেক্ট বাস্তবায়নে সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন।।