Logo

চারজন দিন মজুরের সহায়তায় জমির উদ্দিনের লাখপতি হওয়ার গল্প

রিপোটার : / ৬৯০ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশিত : শুক্রবার, ১৯ জুন, ২০২০

কমলকন্ঠ প্রতিবেদক ।।

কমলগঞ্জের বেশ কয়েকটি গ্রামে চাষিরা উন্নত মানের লেবু চাষে ঝুঁকছেন। বাগানগুলোতে প্রবেশ করলে পাতার ফাঁকে ফাঁকে ধরে থাকা অসংখ্য লেবুর নজর কাড়া সবুজের সমারোহ দেখে যে কারো চোখ স্থির হতে বাধ্য। দেশীয় জাতের বারমাসী এই লেবু চাষ করে যে কেউ অনায়াসেই স্বাবলম্বী হতে পারে এজন্য তার ইচ্ছা শক্তিটাই বড়। সম্প্রতি এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন লেবু চাষি জমির উদ্দিন। তার কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আশ-পাশের বহু কৃষক বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লেবু চাষ শুরু করেছেন। সরকারী কোন প্রশিক্ষণ না নিয়েই লেবু চাষ করে বেকার যুবক জমির উদ্দিন তার ভাগ্যের পরিবর্তন করে শূন্য থেকে আজ লাখপতি।

এ সম্পর্কে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার বাল্লারপাড় গ্রামের বাসিন্দা জমির উদ্দিন জানান,  ২০০৩   সালে মাত্র ৫ হাজার টাকাকে পুঁজি করে জ¦ালানী কাঠ বিক্রির ব্যবসা শুরু করি। ব্যবসার আয় থেকে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে পদ্মছড়া এলাকার জনৈক  শিবরাম তন্তবায় এর বাড়ির আঙ্গিনায় আধকানি জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে দেশীয় জাতের বারমাসী লেবুর চাষ শুরু করি। ৪ জন দিনমজুর শ্রমিক নিয়োগ দানের মাধ্যমে টানা ২বছর পরিচর্যার পর সেসব গাছে ফুল আসে এবং ফল ধরে। লেবু বিক্রী করে সে বছর তার আয় হয় ৫০ হাজার টাকা। পরের বছর তিনি শিবরামসহ দুইজনের  কাছ থেকে তাদের বসতবাড়ীর অব্যবহৃত আরও প্রায় সোয়া দুই একর  জমিতে ১৫ বছরের জন্য বার্ষিক ১০ হাজার টাকা করে ভাড়া প্রদানের শর্তে  লেবুর বাগান করে এখন তিনি আর্থিকভাবে স্বচ্চল। ফলন ও বাজার মূল্য ভালো হওয়ায় মোট আড়াই একর জমির এই লেবু বাগানের মোট ৬০০টি গাছের প্রতিটিতে ২৫০ থেকে ৩০০ লেবু পাওয়া যায়। এভাবে ৬০০টি গাছ থেকে প্রায় দেড় লক্ষ লেবু পাওয়া যায়।

জানা যায়, প্রতি হালি ১০ থেকে ১৫ টাকা করে এই দেড় লক্ষ লেবু পাইকারী বাজারে গত বছর সাত থেকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছেন। তিনি আশা করছেন, এবছর অতিরিক্ত আরও কমপক্ষে দেড় লাখ টাকার লেবু বিক্রি করতে পারবেন তিনি। এ আয়ের টাকা দিয়েই তিনি তার বোনের বিয়ে দিয়েছেন। ছোট ভাইকে যুগিয়েছেন ব্যাবশার পুঁজি। শোধ করেছেন ধার দেনা করে সংগ্রকরা সেই অর্থ। নির্মান করেছেন আধা-পাকাবাড়ী। এই ফলজ গাছের পাশাপাশি মৌসুমী বিভিন্ন সবজীর চাষাবাদ করে আজ স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন জমির উদ্দিন। তার এমন সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজ ইউনিয়নসহ আশেপাশের বিভিন্ন ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের অনেক চাষি প্রতিযোগিতামূলকভাবে লেবু চাষে এগিয়ে আসছেন। জেলার হাট-বাজারে এসব লেবু ক্রেতাদের নজর কাড়ছে সহজেই। সাধারণতঃ ফাল্গুন ও চৈত্র মাসে লেবুর ফুল আসতে শুরু করে। আর ফলন দেয় জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ়-শ্রাবণ-ভাদ্র মাসজুড়ে। গ্রীষ্মের গরমে, রমজান মাসে, বিভিন্ন বিবাহ ও পারিবারিক অনুষ্ঠানে লেবুর কদর বেশি হওয়ায় এ লেবুর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। সারা বছরই এর চাহিদা থাকায় বর্তমান বাজারে লেবুর দাম এখন আকাশ ছোঁয়া। প্রতি হালি (৪টি) লেবুর দাম ২০ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে এখানকার বিভিন্ন হাট-বাজারগুলোতে।

জমির উদ্দিন বলেন, তিনি বলেন, শুরুতে খুব কষ্ট করতে হয়েছে, এখন আর কষ্ট নেই। লেবু বাগানই তাকে ভাগ্য ঘুরিয়ে দিয়েছে। লেবু চাষ লাভজনক হওয়াতে দিন দিন ওই এলাকায় লেবু চাষির সংখ্যা বাড়লেও লেবু চাষের জন্য সরকারি কোন আর্থিক সহায়তা কিংবা কৃষি বিভাগের কোন পরামর্শ তারা পান না। এখানে সরকার তথা কৃষি বিভাগ প্রযুক্তিগতভাবে প্রশিক্ষণসহ লেবু চাষে নিয়মিত আর্থিক সহযোগিতা করলে একদিকে যেমন বেড়ে যাবে শ্রমজীবিদের কর্মসংস্থান অন্যদিকে এই এলাকা থেকে অনায়াসে আয় হতো কোটি কোটি টাকা। ফিরে আসতো ঘরে ঘরে আর্থিক স্বচ্ছলতা। 

জমির উদ্দিনের লেবুর চাষাবাদকে অনুকরণ করে সম্প্রতি ওই এলাকার  মিজান মিয়া, রমজান মিয়া, জহির মিয়া, আনোয়ার, সাঈদ মিয়াসহ আরও অনেকে লেবু চাষে ঝুঁকে পড়েছেন।

কমলগঞ্জ উপজেলা শহরের পাইকারি আড়ৎ ব্যবসায়ী আব্দুল জলিল জানান, আমার মত উপজেলার আদমপুর ও শমসেরনগরে আরও ৩-৪ টি আড়ৎ রয়েছে। ওই এলাকার লেবু চাষিরা আমাদের আড়তে লেবু বিক্রির পাশাপাশি শ্রীমঙ্গল উপজেলাস্থ দেশের বৃহত্তম লেবুর পাইকারী বাজারে তাদের উৎপাদিত লেবু বিক্রী করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।

কমলগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি বিশ্বজিৎ রায় জানান, অর্থকরী এ ফসল বহমুখীকরণের লক্ষ্যে উৎসাহিত চাষিদের প্রকল্প সুবিধার মাধ্যমে প্রশিক্ষণ ও উন্নত চাষাবাদে উৎসাহিত করলে সার্বিকভাবে কৃষি ও কৃষকের উন্নয়ন ঘটবে। তখন প্রতিটি গ্রামে-গ্রামে জমির উদ্দিনের মতো ভাগ্য পাল্টানোর খবর শোনা যাবে।


আরো সংবাদ পড়ুন...
Developed By Radwan Ahmed