২৫ অক্টোবর দশমীতে ভাসানের মধ্য দিয়ে শারদোৎসব সম্পন্ন হল কমলগঞ্জে । আসছে বছর আবার হবে-এই বার্তাকে সামনে রেখে মঙ্গলবার কমলগঞ্জের বুক চিরে বয়ে যাওয়া ধলাই নদীর বিসর্জনঘাটে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে এবার শারদোৎসব সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হল কমলগঞ্জে । বিশেষ করে কোনোরূপ অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই এবার কমলগঞ্জে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হল সনাতনী সম্প্রদায়ের শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গোৎসব। মঙ্গলবার শহরের ছোটবড় ব্যক্তিগত ও বারোয়ারি পুজো মিলিয়ে প্রায় কুড়িটি প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয়। তবে মহানবমী থেকে দশমী প্রকৃতির মেঘলা আকাশ এই উৎসবের আনন্দে থাবা বসাতে চাইলেও এতে তেমন ভাঁটা পড়েনি। বিশুদ্ধ পঞ্জিকা মতে শনিবার প্রায় যষ্ঠীর দিন থেকে প্রান্তিক এই শহরে উৎসবের রং লেগে গিয়েছিল। সপ্তমী ও অষ্টমীর সন্ধ্যায় প্রতিটি মণ্ডপে ভক্তদের তেমন দেখা না মিললেও নবমীতে চেনা শহরের প্রায় প্রতিটি মণ্ডপে ঢল নামে ভক্তদের। রাত বারোটা অবধি শহরের অনেক মণ্ডপে প্রতিমা দেখতে দেখা গেছে উৎসাহী দর্শনার্থীদের। পুজোর তিনদিন পর মঙ্গলবার ভাসানপর্বে কমলগঞ্জকে মেতে উঠতে দেখা যায় তার পরিচিত রূপেই।
এদিকে সরকারি এক পরিসংখ্যান মতে, এ বছর কমলগঞ্জ উপজেলায় ১৪৬টি সার্বজনীন ও ১৭টি ব্যক্তিগত মণ্ডপে পুজো অনুষ্ঠিত হয়।
ক্রমবর্ধমান দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির যুগে ও আর্থিক মন্দাভাবের দরুণ প্রান্তিক শহরে এবার মণ্ডপসজ্জায় তেমন সাড়া না জাগালে ও অধিকাংশ পুজো কমিটির ছোট আকৃতির প্রতিমাগুলো অনেকের নজর কাড়ে। পুজোকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রায় প্রতিটি মণ্ডপে আনসার ও পুলিশি নজরদারি ছিল। জনস্রোত ঠেকাতে হিমশিম খেতে হয় নিরাপত্তা কর্মীদের। সেই পথচলা প্রতিমা দর্শনে কারও মুখে যেন নেই কোনও ক্লান্তির ছাপ। নিজেদের রোজকার জীবনের সব চাওয়া-পাওয়াকে ভুলে গিয়ে সবাই যেন এক আনন্দযজ্ঞে শরিক হয়ে মহা নবমীর রাতকে করে তোলে এক ব্যতিক্রমী রাত। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও পুজো উপলক্ষ্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছিল সার্ক্ষনিক নজরদারী ।
মহানবমীর রাত থেকেই জানাতেই হবে। আসছে বছর আবার হবে। মর্তে আগমন ঘটবে উমামায়ের। এই আশায় মঙ্গলবার সেই সকাল থেকেই প্রতিটি পুজো মণ্ডপে বিদায়ের আয়োজনের পাশাপাশি সিঁদুরখেলায় মত্ত হয়ে উঠেন ঘরের মহিলারা। সমস্ত দিন গড়িয়ে দশমীর সন্ধ্যায় কমলগঞ্জ কেন্দ্রীয় সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটির প্রতিমা ব্যতিত পৌরএলাকা ও তার আশপাশের মন্ডপগুলির পূজা কমিটি তাদের দুর্গা প্রতিমা নিয়ে বিশাল এক শোভাযাত্রা সহকারে পা মেলান মায়ের অজস্র ভক্তরা। মায়ের বিদায়বেলা বিষাদের যন্ত্রণাকে ভুলে গিয়ে লাল-নীল আবির মেখে উচ্চৈস্বরে মাইকের গানের সুরে কোমর দোলাতে দেখা গেছে সাত থেকে ষাটের লোকদেরও।
রাতের প্রতিমা ভাসানের পর মনিপুরী পল্লীগুলোতে দশ মাথাযুক্ত রাবণের কুশপুত্তলিকা জ্বালিয়ে অশুভ শক্তির বিনাসের মধ্য দিয়ে শুভশক্তি প্রতিষ্ঠা করে। সব মিলিয়ে প্রসাসনের আন্তরিকতা এবছর ভালোয় ভালোয় কেটেছে এই উৎসব ।